cold3

শিশুর বুকে কফ জমার লক্ষণ সমূহ

শিশুদের স্বাস্থ্য সবসময়ই বাবা-মায়ের জন্য সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে শিশুদের কফ বা শ্বাসনালীর সমস্যার সময় তারা খুব অস্থির হয়ে ওঠে। বাচ্চাদের কফ সাধারণত ঠান্ডা, ভাইরাস, অ্যালার্জি অথবা ফুসফুসের হালকা সংক্রমণের কারণে হতে পারে। তবে ছোট শিশুদের কফ নিয়ন্ত্রণ না করলে তা শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং তারা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় বাবা-মায়েরা কফকে সাধারণ জ্বর বা সর্দি হিসেবে উপেক্ষা করে থাকেন। কিন্তু শিশুদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

শিশুদের শরীর প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল, তাই তাদের কফ বা শ্বাসনালীর সমস্যা দ্রুত সনাক্ত করা জরুরি। এছাড়া বাচ্চাদের কফের ধরন ভিন্ন হতে পারে – কখনো ঘন, কখনো পাতলা, আবার কখনো রঙ পরিবর্তিত হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলোকে লক্ষ্য করলে প্রাথমিক সতর্কতা নেওয়া যায়।

বাংলাদেশে অনেক শিশুদের আয়ু খুব কম হওয়ায়, কফ বা শ্বাসজনিত অসুবিধা সহজেই গুরুতর আকার নিতে পারে। তাই সচেতন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মায়েদের জানা দরকার কীভাবে ঘরে বসে শিশুদের কফ দূর করা যায়, কোন লক্ষণগুলো গুরুত্বের, এবং কোন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা নিরাপদ।

এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব শিশুদের কফ দূর করার ঘরোয়া উপায়, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঔষধ সমূহ। এছাড়াও জানতে পারবেন কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। তথ্যগুলো সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে যাতে প্রতিটি বাবা-মা সহজে বুঝতে পারে এবং বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে।

শিশুদের কফ দূর করার জন্য ঘরে কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি রয়েছে যা প্রায়ই নিরাপদ এবং কার্যকর। তবে সব সময় মনে রাখতে হবে, শিশুদের কফ কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। সঠিক যত্ন এবং সতর্কতার মাধ্যমে শিশুদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করা সম্ভব।

শিশুদের কফ শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যা নয়, এটি তাদের মনোযোগ, ঘুম এবং দৈনন্দিন কাজকর্মেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রাথমিকভাবে ঘরে নিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহার করে কফ কমানো সবচেয়ে ভালো উপায়। এছাড়াও শিশুর বুকে কফ জমার লক্ষণ সঠিকভাবে শনাক্ত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বাচ্চাদের কফ দূর করার উপায়

cold9

শিশুদের কফ দূর করা অনেক সময় বাবা-মায়েদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মনে হয়। তবে কিছু সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে কফ অনেকটাই কমানো যায়। প্রথমেই মনে রাখতে হবে, শিশুদের জন্য কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই তাদের বয়স ও শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রাখতে হবে।

  • পর্যাপ্ত পানি পান করানো: শিশুকে নিয়মিত পানি, দুধ বা গরম দুধের সঙ্গে কিছুটা মধু দিতে পারেন (এক বছর বা তার বেশি বয়সের শিশুর জন্য)। পানি শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং কফকে পাতলা করে বের করতে সাহায্য করে।
  • ভাপ সেবন করানো: বাথরুমে গরম পানি দিয়ে বাচ্চাকে কয়েক মিনিট বসিয়ে ভাপ খাওয়ানো যেতে পারে। গরম ভাপ শ্বাসনালীর কফ ঢিলা করে সহজে বের হয়।
  • গরম পানির গার্গল: বড় শিশুদের জন্য গরম পানি দিয়ে হালকা গার্গল করানোও কার্যকর। এটি গলার কফ কমাতে সাহায্য করে।
  • মধু ব্যবহার: এক বছর বা তার বেশি বয়সের শিশুর জন্য মধু প্রাকৃতিক কফ কমানোর শক্তিশালী উপায়। গরম দুধ বা পানি সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন।
  • প্রাকৃতিক সিরাপ: আদা, তুলসী এবং মৌরি দিয়ে ঘরোয়া সিরাপ তৈরি করে শিশুদের দিতে পারেন। এটি কফ হ্রাসে সহায়ক।
  • শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখা: শিশু ঘুমানোর আগে হালকা মাসাজ করে বুক পরিষ্কার করুন। বাচ্চার বুকের উপর হালকা চাপ দিয়ে কফ নড়াচড়া করানো যেতে পারে।
  • সঠিক ঘুমের পরিবেশ: শিশুর ঘুমের সময় মাথা সামান্য উঁচু করে রাখলে শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয় এবং কফ কম জমে।
  • ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখা: ডিহিউমিডিফায়ার বা গরম পানি দিয়ে ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখলে কফ পাতলা হয় এবং সহজে বের হয়।
  • ধুলো ও অ্যালার্জেন থেকে দূরে রাখা: শিশুর চারপাশে ধুলো, ধোঁয়া বা অ্যালার্জেন কমিয়ে দিন। এটি কফ উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে।
  • সঠিক খাদ্য প্রদান: ঠান্ডা, চর্বিযুক্ত এবং মশলাযুক্ত খাবার কম খাওয়ানো উচিত। হালকা, গরম এবং সহজ হজমযোগ্য খাবার কফ কমাতে সাহায্য করে।
আরোও পড়ুনঃ  খাসির কলিজা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

শিশুদের কফ দূর করার এই পদ্ধতিগুলো সাধারণত নিরাপদ এবং কার্যকর। তবে যদি কফ দীর্ঘদিন ধরে থাকে বা শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়, তখন অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শিশুর বুকে কফ জমার লক্ষণ সমূহ

cold7

শিশুর বুকে কফ জমা হলে তা প্রাথমিকভাবে ছোটখাট সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়, কিন্তু সময়মতো শনাক্ত না করলে শ্বাসনালীতে বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে বর্ণিত প্রতিটি লক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাবা-মায়েদের সচেতন থাকতে হবে।

১. ঘন কফ বা কফ জমে থাকা

শিশুর শ্বাসনালীতে যখন কফ জমে, তখন তা ঘন এবং ঘেঁষে থাকে। ঘন কফ সাধারণত শিশুর গলা বা বুকের মধ্যে চাপ অনুভূত করায় শিশুর নাক এবং গলার পথে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শিশু হাঁপিয়ে ওঠে, ঘুমের সময় ঘন ঘন কাশি করে এবং কখনো কখনো শ্বাসের সময় হুইসিং বা ফিসফিস শব্দ করে। এই কফ সহজে বের হয় না, ফলে শিশুর বুকের ভিতরে জমে থাকে। শীতকালে বা ঠান্ডার সময় ঘন কফ আরও বাড়তে পারে। বাবা-মায়েরা লক্ষ্য করলে দেখবেন শিশু খাওয়ার সময় কফ জমার কারণে খাবার ঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। ঘন কফ যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তাহলে এটি ফুসফুসের সমস্যার সূচকও হতে পারে। ঘরোয়া উপায়ে যেমন ভাপ দেওয়া, গরম পানি এবং মধু দেওয়া, ঘন কফ পাতলা করতে সাহায্য করতে পারে। তবে যদি কফ খুব ঘন হয় এবং শিশুর শ্বাসনালীতে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

২. দীর্ঘস্থায়ী কাশি

শিশু যদি নিয়মিত কাশি করে এবং তা কয়েক দিন ধরে চলে, তাহলে এটি কফ জমার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কাশি প্রাথমিকভাবে হালকা হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘন বা শক্ত কাশিতে পরিণত হয়। বিশেষ করে রাতে, ঘুমের সময় কাশি বেশি হয়, কারণ শিশুর বুকের কফ রাতের দিকে জমে থাকে। কাশির সঙ্গে শিশুর অস্থিরতা, ঘুম ভাঙা এবং শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। এই সময় শিশু কষ্টে নড়াচড়া করে এবং কখনো হাঁচি বা নাক দিয়ে কফ বের করার চেষ্টা করে। বাবা-মায়েরা লক্ষ্য করলে দেখবেন শিশুর গলা ঘষা বা খসখস শব্দ করছে। দীর্ঘস্থায়ী কাশি কখনো কখনো শ্বাসনালীতে সংক্রমণের ইঙ্গিতও দেয়। তাই ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি সতর্ক থাকা জরুরি।

৩. শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হওয়া

শিশুর বুকের কফ জমলে শ্বাস নেওয়ার সময় বিশেষ ধরনের শব্দ শোনা যায়। এটি হুইসিং বা ফিসফিস শব্দের মতো, যা প্রমাণ করে শ্বাসনালীতে বাধা রয়েছে। সাধারণত এটি রাতে বা শিশুর ঘুমের সময় বেশি লক্ষ্য করা যায়। শ্বাসের সময় এমন শব্দ শিশু অস্বস্তি বা অস্থিরতা অনুভব করতে পারে। ধীরে ধীরে কফ বাড়লে শ্বাসের সময় শিশুর বুকের তীব্র চাপ অনুভূত হয় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বাবা-মায়েদের উচিত শ্বাসের এই ধরনের শব্দকে হালকাভাবে না নেওয়া। শ্বাসনালীতে কফ জমার জন্য এটি প্রাথমিক সতর্কতা।

৪. বুকে চাপ বা অস্বস্তি

শিশুর বুকের ভিতরে কফ জমলে শিশুর বুকে চাপ বা অস্বস্তি অনুভূত হয়। ছোট শিশু এই চাপকে কাঁদা বা অস্থিরতা দিয়ে প্রকাশ করে। বিশেষ করে খেলাধুলার সময় বা খাবারের সময় শিশুর অস্বস্তি দেখা যায়। বুকে চাপ অনুভূত হলে শিশুর নাড়ি বা শ্বাস দ্রুত হতে পারে। ঘুমের সময়ও শিশু অস্বস্তি বোধ করে এবং নড়াচড়া বেশি করে। বাবা-মায়েরা শিশুর বুকের অস্বস্তির এই ধরনের লক্ষণ সহজেই শনাক্ত করতে পারে। প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতি যেমন বুকের হালকা মাসাজ, ভাপ এবং গরম পানি দেওয়া সাহায্য করে।

আরোও পড়ুনঃ  ফাটা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে?

৫. ঘুমের সমস্যা

শিশুর বুকে কফ জমলে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে। বিশেষ করে রাতের সময় হঠাৎ কাশি বা শ্বাসকষ্টের কারণে শিশুর ঘুম ভেঙে যায়। শিশুর ঘুমের মান কমে গেলে দিনের সময় সে অস্থির ও ক্লান্ত থাকে। ঘুমের অভাবে শিশুর খিদে কমে যেতে পারে এবং খেলাধুলার সময় মনোযোগ হারাতে পারে। বাবা-মায়েরা লক্ষ্য করলে দেখবেন শিশু ঘুমের সময় বারবার ঘোরাফেরা করছে বা কাঁদছে। ঘুমের সমস্যা শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক উন্নয়নেও প্রভাব ফেলতে পারে।

৬. গলা খসখস শব্দ

শিশুর গলার ভিতরে কফ জমলে গলা খসখস বা খসখস ধরণের শব্দ করে। এটি সাধারণ সর্দির চেয়ে আলাদা এবং শিশু শারীরিকভাবে অস্বস্তি অনুভব করে। গলা খসখস থাকলে শিশু কথা বলার সময় কষ্ট অনুভব করতে পারে। কফ বের করতে শিশুকে হালকা গরম পানি বা ভাপ দেওয়া সহায়ক হতে পারে। তবে যদি দীর্ঘদিন এই ধরণের শব্দ থাকে, তবে এটি শ্বাসনালীতে সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে।

৭. খাবার হজমে সমস্যা

কফ জমার কারণে শিশুর খাবার হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গলার ভিতরে কফ থাকলে শিশুর ঠিকমতো খাবার নাও হজম হতে পারে। ছোট শিশু খাবার খেতে অস্বস্তি বোধ করে, খাওয়ার সময় হাঁচি বা কাশি করতে থাকে। ফলে শিশুর পুষ্টি গ্রহণ কমে যায়। বাবা-মায়েরা লক্ষ্য করলে দেখবেন শিশু খাবারের সময় অস্থির এবং প্রায়ই খাবার থুতু বা কাশি করে।

৮. অস্থিরতা ও কান্না

শিশু অস্বাভাবিকভাবে অস্থির হয়ে ওঠে এবং ক্রমাগত কাঁদে। বিশেষ করে রাতে বা খেলাধুলার সময় অস্থিরতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। কফ জমার কারণে শিশুর বুক ও গলার মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়। শিশুর অস্থিরতা কখনো কখনো শারীরিক অসুবিধার ইঙ্গিত দেয়। বাবা-মায়েদের উচিত শিশুর কান্না এবং অস্থিরতার কারণ খুঁজে বের করা।

৯. শ্বাসের হার বৃদ্ধি

কফ জমা থাকলে শিশুর শ্বাসের হার বেড়ে যায়। সহজে হাঁপিয়ে ওঠে এবং ছোট ছোট কাজেও ক্লান্তি অনুভব করে। শিশুর শ্বাসনালীতে কফ জমা থাকলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পান করতে পারে না। ফলে শিশুর বুক ফোলা বা দ্রুত শ্বাস নেওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। বাবা-মায়েরা যদি শিশুর শ্বাসের হার অস্বাভাবিক দেখেন, তা সতর্কতার সংকেত।

১০. জ্বর ও সর্দি

কফ জমার সঙ্গে মাঝে মাঝে হালকা জ্বর বা সর্দিও দেখা দিতে পারে। যদিও সব সময়ই জ্বর থাকে না, তবে এটি কফজনিত সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে নাকের জল পড়া, কাশি এবং গলার খসখস দেখা যায়। বাবা-মায়েরা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন যে শিশুর কফ সাধারণ সর্দি নয়, বরং শ্বাসনালীর সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।

শিশুর বুকের কফ বের করার ঔষধ

cold6

শিশুর বুকের কফ কমাতে বা বের করতে অনেক ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়। তবে শিশুদের জন্য সব ধরনের ঔষধ নিরাপদ নয়। তাই ডাক্তার নির্দেশিত ঔষধ ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ। কফ কমানোর জন্য সাধারণত দুই ধরনের ঔষধ ব্যবহৃত হয় – একটি হলো শ্লেষ্মা পাতলা করা (Expectorants) এবং দ্বিতীয় হলো কাশির উপশমকারী (Cough suppressants)

শ্লেষ্মা পাতলা করা ঔষধ কফকে তরল করে দেয়, যাতে শিশু সহজে কফ বের করতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুকে পর্যাপ্ত পানি দেওয়া জরুরি, কারণ পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং কফ বের হতে সাহায্য করে। এছাড়া কিছু ঘরোয়া উপায় যেমন ভাপ দেওয়া, গরম পানি বা মধু দেওয়াও সহায়ক।

আরোও পড়ুনঃ  রাঙ্গামাটি কিসের জন্য বিখ্যাত?

কাশির উপশমকারী ঔষধ শিশুর প্রচণ্ড কাশি কমাতে সাহায্য করে। তবে এক বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য এই ধরনের ঔষধ সাধারণত নিরাপদ নয়। বড় শিশুর ক্ষেত্রে ডাক্তার নির্দেশনা অনুযায়ী এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে শিশুদের কফের জন্য সাধারণত ব্যবহৃত কিছু ঔষধ হলো: ডেক্সট্রোমেথরফান (Dextromethorphan), গুইফেনেসিন (Guaifenesin) এবং হালকা ব্রংকোডিলেটর সিরাপ। এগুলো ডাক্তার পরামর্শক্রমে ব্যবহার করা উচিত। ঔষধের ডোজ শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী ঠিক করা হয়।

কফের সঙ্গে যদি সংক্রমণ থাকে, তাহলে কখনো কখনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হতে পারে। তবে সাধারণ ভাইরাসজনিত কফে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয় না। ঔষধ ব্যবহারের পাশাপাশি শিশুর ঘর পরিষ্কার রাখা, ধুলো কমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর কফ নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ ব্যবহার করার আগে বাবা-মায়েদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ভুল ঔষধ বা ডোজ শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ঔষধের পাশাপাশি ঘরে নিরাপদ প্রাকৃতিক পদ্ধতিও ব্যবহার করা যায়। এতে শিশুর বুকের কফ দ্রুত কমে এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকে।

শিশুর বুকের কফ নিয়ন্ত্রণে ঔষধের সঙ্গে ভাপ দেওয়া, হালকা মাসাজ, গরম পানির ব্যবহার এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানো খুবই কার্যকর। এভাবে শিশুর কফ দ্রুত কমে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয়।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“শিশুর বুকে কফ জমার লক্ষণ সমূহ” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো

শিশুদের কফ দূর করার জন্য ঘরোয়া কোন পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর?

শিশুদের কফ কমাতে গরম পানি, ভাপ দেওয়া, পর্যাপ্ত পানি এবং এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য মধু দেওয়া কার্যকর। এছাড়া হালকা বুক মাসাজ ও ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখা সহায়ক।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?

যদি কফ দীর্ঘদিন ধরে থাকে, শিশুর শ্বাসনালীতে সমস্যা হয়, ঘন কফ বা জ্বর দেখা দেয়, তখন অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি।

উপসংহার

শিশুদের কফ সাধারণ সমস্যা হলেও এটি যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহলে তা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে। বাবা-মায়েদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো কফের প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করা এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া। ঘন কফ, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসের সময় শব্দ, বুকে চাপ, ঘুমের সমস্যা—এসব লক্ষণ শিশুদের জন্য সতর্কবার্তা।

শিশুর কফ কমাতে ঘরোয়া পদ্ধতি যেমন পর্যাপ্ত পানি, ভাপ দেওয়া, হালকা মাসাজ, গরম পানি এবং মধু দেওয়া কার্যকর। এছাড়া শিশুর চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, ধুলো-ধোঁয়া কমানো এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহ করা কফ কমাতে সাহায্য করে।

প্রয়োজনে শিশুর বুকের কফ বের করার জন্য ডাক্তার নির্দেশিত ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ঔষধের ব্যবহার সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। শ্লেষ্মা পাতলা করা ঔষধ, কাশির উপশমকারী সিরাপ এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি শিশুর শ্বাসনালী সুস্থ রাখতে সহায়ক।

শিশুর স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস, ঘুম এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমের জন্য কফ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মায়েদের সচেতনতা, প্রাথমিক পদক্ষেপ এবং ডাক্তার পরামর্শ মিলে শিশুকে কফমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

সঠিক যত্ন এবং ঘরোয়া ও চিকিৎসাজনিত পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুদের কফ দ্রুত কমানো সম্ভব। নিয়মিত মনিটরিং এবং সতর্কতা শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। বাবা-মায়েরা যদি সময়মতো এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তাহলে শিশুদের কফজনিত সমস্যা থেকে মুক্ত রাখা সহজ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *