রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার কারণ?
রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ। এটি সাধারণ জ্বরের চেয়ে আলাদা কারণ এটি রাতে হঠাৎ ঘটে এবং শারীরিক শক্তি হ্রাস করে। বাংলাদেশে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া, অপরিষ্কার পানি এবং সংক্রমণ বেশি হওয়ায় এই ধরনের জ্বর বেশ দেখা যায়।
প্রাথমিক পর্যায়ে শরীরের অন্যান্য লক্ষণ যেমন ক্লান্তি, মাথাব্যথা বা ঘাম দিয়ে জ্বর প্রায়শই উপেক্ষিত হয়। তবে ঘন ঘন রাতের জ্বর গুরুতর রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে, সংক্রমণ, দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা পুষ্টিহীনতার কারণে রাতের কাঁপুনি এবং জ্বর বৃদ্ধি পায়।
এই ব্লগে আমরা জানব—রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বরের প্রধান কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধের উপায়।
রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার কারণ?
রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা একাধিক কারণে হতে পারে। এটি হঠাৎ বা ধীরে ধীরে দেখা দেয়। নিচে ১০টি প্রধান কারণ ও তাদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।
১. ম্যালেরিয়া সংক্রমণ
ম্যালেরিয়া হলো সবচেয়ে পরিচিত কারণ যা রাতে কাঁপুনি এবং জ্বরের সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে গরম এবং আর্দ্র এলাকায় মশার কারণে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ বেশি।
রোগীর জ্বর সাধারণত প্রতি দুই-তিন দিনে আসে এবং সাথে ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি থাকে।
মশারি ব্যবহার, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
২. টাইফয়েড
টাইফয়েড সংক্রমণও রাতে কাঁপুনি এবং জ্বরের কারণ হতে পারে।
অপরিষ্কার পানি, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং হাইজিনের অভাবে বাংলাদেশে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়।
রোগীর জ্বর, মাথাব্যথা, পেট ব্যথা এবং দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়।
ডাক্তারি পরীক্ষা ও সম্পূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স গ্রহণ রোগ নিরাময় নিশ্চিত করে।
৩. ইউটিআই (মূত্রনালীর সংক্রমণ)
মূত্রনালীর সংক্রমণ রাতে কাঁপুনি সহ জ্বর তৈরি করতে পারে।
নারী ও বয়স্কদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
সঠিক হাইজিন, পর্যাপ্ত পানি এবং ডাক্তারি পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।
৪. ভাইরাস সংক্রমণ
ডেঙ্গু, করোনাভাইরাস বা সাধারণ ভাইরাস ঘন ঘন রাতে জ্বরের কারণ হতে পারে।
শিশু, বৃদ্ধ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা মানুষ সংক্রমণে সহজে আক্রান্ত হয়।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং ডাক্তারি পরামর্শ সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
৫. লিভার সংক্রমণ
হেপাটাইটিস বা লিভারের সংক্রমণও রাতের কাঁপুনি এবং জ্বরের কারণ।
রোগীর চোখ বা ত্বকে হলদে ভাব, ক্ষুধামন্দ ও ক্লান্তি দেখা দেয়।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ডাক্তারি চিকিৎসা দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
৬. অটোইমিউন বা প্রদাহজনিত রোগ
লুপাস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অন্যান্য অটোইমিউন রোগ শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি করে।
রাতে কাঁপুনি এবং জ্বরের পুনরাবৃত্তি দেখা যায়।
নিয়মিত ডাক্তারি পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৭. রক্ত সংক্রমণ (সেপটিসিমিয়া)
রক্তে সংক্রমণ ঘন ঘন রাতে জ্বরের কারণ হতে পারে।
রোগীর শীতলতা, ক্লান্তি এবং কখনও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
৮. ক্যান্সার বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ
কিছু ক্যান্সার বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ রাতের জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে এবং সংক্রমণ বা প্রদাহ বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা এবং রোগ নিরাময়ের জন্য সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
৯. পুষ্টিহীনতা ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিনের অভাব শরীর দুর্বল করে।
শিশু, বৃদ্ধ এবং কম খাওয়া মানুষ বিশেষভাবে ঝুঁকিতে থাকে।
সঠিক পুষ্টি, সাপ্লিমেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য শরীরকে শক্তিশালী রাখে।
১০. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধ শরীরে রাতের জ্বর এবং কাঁপুনি সৃষ্টি করতে পারে।
ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ পরিবর্তন বা ডোজ সমন্বয় করতে হবে।
অতিরিক্ত বা ভুল ওষুধ শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
উপসংহার
রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা একটি সতর্কতার লক্ষণ। এটি ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ইউটিআই, ভাইরাস সংক্রমণ, লিভার সমস্যা, অটোইমিউন রোগ, রক্ত সংক্রমণ, ক্যান্সার বা পুষ্টিহীনতার কারণে হতে পারে।
বাংলাদেশে খাদ্যাভ্যাস, দূষিত পরিবেশ এবং অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে রাতের জ্বরের পুনরাবৃত্তি বেশি দেখা যায়।
প্রাথমিক সতর্কতা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি, পর্যাপ্ত ঘুম, পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা জ্বর প্রতিরোধে সহায়ক।
শিশু, বৃদ্ধ এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
অ্যান্টিবায়োটিক সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ, সংক্রমিত রোগীর সঙ্গে সংস্পর্শ কমানো এবং পরিবেশ পরিষ্কার রাখা জরুরি।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং নিয়মিত পরীক্ষা রাতের কাঁপুনি ও জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
