চট্টগ্রাম টু ঢাকা বাসের সময়সূচী ও ভাড়া
বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও ঢাকা—এই দুই শহরের মধ্যে যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো বাস। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা কিংবা পারিবারিক কারণে এই দুই শহরের মধ্যে যাতায়াত করেন। রেল ও বিমান যোগাযোগ থাকলেও বাস ভ্রমণই সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য। বর্তমানে বিভিন্ন প্রাইভেট ও সরকারী পরিবহন কোম্পানি আধুনিক এসি ও নন-এসি কোচ সার্ভিস চালু করেছে, যা যাত্রাকে আরামদায়ক করেছে। বিশেষ করে অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমের কারণে এখন ঘরে বসেই বাসের টিকিট কাটা যায়।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ২৬৫ কিলোমিটার, যা সাধারণত ৬ থেকে ৭ ঘণ্টায় অতিক্রম করা যায়। তবে যানজট বা রাস্তার অবস্থার উপর সময় কিছুটা কমবেশি হতে পারে। ভাড়া নির্ভর করে বাসের ধরন ও সার্ভিসের মানের উপর—নন-এসি বাসের ভাড়া তুলনামূলক কম, আর এসি ও ভিআইপি কোচের ভাড়া কিছুটা বেশি। নিচে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন বাসের সময়সূচী ও প্রায় ভাড়ার তালিকা তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রাম টু ঢাকা বাসের সময়সূচী ও ভাড়া

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী বাস সার্ভিস প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলাচল করে। বেশিরভাগ বাস কোম্পানি প্রথম ট্রিপ সকাল ৬টার দিকে চালু করে এবং শেষ ট্রিপ রাত ১১টার মধ্যে সম্পন্ন করে। কিছু ভিআইপি কোচ রাতেও চলে। যাত্রীরা তাদের সুবিধামতো সময়ে ও পছন্দের কোম্পানির বাস বেছে নিতে পারেন। নিচের টেবিলে জনপ্রিয় বাসগুলোর প্রায় ভাড়া ও সময়সূচী তুলে ধরা হয়েছে।
| বাস কোম্পানি | ভাড়া (প্রায়) | প্রথম ট্রিপ | শেষ ট্রিপ | ফ্রিকোয়েন্সি | 
|---|---|---|---|---|
| হানিফ এন্টারপ্রাইজ | নন-এসি: ৳680, এসি: ৳1200 | সকাল ৬:০০ | রাত ১১:০০ | প্রতি ৩০ মিনিটে | 
| শ্যামলী পরিবহন | নন-এসি: ৳700, এসি: ৳1300 | সকাল ৬:৩০ | রাত ১০:৩০ | প্রতি ঘন্টায় | 
| গ্রীন লাইন পরিবহন | এসি: ৳1500–৳1800 | সকাল ৭:০০ | রাত ১১:৩০ | প্রতি ১ ঘণ্টায় | 
| ঈগল পরিবহন | নন-এসি: ৳650, এসি: ৳1200 | সকাল ৬:০০ | রাত ১০:০০ | প্রতি ৪৫ মিনিটে | 
| সোহাগ পরিবহন | এসি: ৳1500, নন-এসি: ৳750 | সকাল ৭:৩০ | রাত ১১:০০ | প্রতি ১ ঘণ্টায় | 
| এনায়েতপুর পরিবহন | নন-এসি: ৳600, এসি: ৳1100 | সকাল ৫:৩০ | রাত ৯:৩০ | প্রতি ঘন্টায় | 
| গ্লোরি এক্সপ্রেস | এসি: ৳1300 | সকাল ৮:০০ | রাত ১০:০০ | দিনে ৬ বার | 
| গাজী ট্রাভেলস | নন-এসি: ৳650 | সকাল ৬:১৫ | রাত ৯:০০ | প্রতি ঘন্টায় | 
এই সময়সূচী ও ভাড়া মৌসুম, ট্রাফিক ও কোম্পানি নীতির ভিত্তিতে পরিবর্তন হতে পারে। সর্বশেষ তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট বাস কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা টিকিট কাউন্টার যোগাযোগ করা উত্তম।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বাসের কাউন্টার তালিকা
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী বাসগুলো মূলত রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে ছাড়ে, যাতে যাত্রীরা নিজেদের সুবিধামতো জায়গা থেকে উঠতে পারেন। গাবতলী, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কল্যাণপুর, বনানী ও যাত্রাবাড়ী হলো প্রধান বাস টার্মিনাল। প্রতিটি পরিবহন কোম্পানির নিজস্ব কাউন্টার রয়েছে, যেখানে টিকিট বিক্রি, সিট বুকিং ও যাত্রা সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়। নিচে জনপ্রিয় বাস কোম্পানিগুলোর কাউন্টার নাম ও যোগাযোগ নম্বরসহ বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো।
| বাস কোম্পানি | কাউন্টার নাম | মোবাইল নম্বর | 
|---|---|---|
| হানিফ এন্টারপ্রাইজ | গাবতলী কাউন্টার | 01713-402520 | 
| কল্যাণপুর কাউন্টার | 01713-402521 | |
| সায়েদাবাদ কাউন্টার | 01713-402522 | |
| ফকিরাপুল কাউন্টার | 01713-402523 | |
| শ্যামলী পরিবহন | গাবতলী (শ্যামলী বাস টার্মিনাল) | 01714-068881 | 
| ফকিরাপুল কাউন্টার | 01714-068882 | |
| সায়েদাবাদ কাউন্টার | 01714-068883 | |
| গ্রীন লাইন পরিবহন | রাজারবাগ কাউন্টার | 01730-060060 | 
| বনানী কাউন্টার | 01730-060061 | |
| গুলিস্তান কাউন্টার | 01730-060062 | |
| ঈগল পরিবহন | গাবতলী কাউন্টার | 01711-073131 | 
| সায়েদাবাদ কাউন্টার | 01711-073132 | |
| যাত্রাবাড়ী কাউন্টার | 01711-073133 | |
| সোহাগ পরিবহন | কল্যাণপুর কাউন্টার | 01711-318719 | 
| ফকিরাপুল কাউন্টার | 01711-318720 | |
| সায়েদাবাদ কাউন্টার | 01711-318721 | |
| এনায়েতপুর পরিবহন | গাবতলী কাউন্টার | 01711-405510 | 
| সায়েদাবাদ কাউন্টার | 01711-405511 | |
| গ্লোরি এক্সপ্রেস | ফকিরাপুল কাউন্টার | 01715-484949 | 
| সায়েদাবাদ কাউন্টার | 01715-484950 | |
| গাজী ট্রাভেলস | গাবতলী কাউন্টার | 01712-502580 | 
| যাত্রাবাড়ী কাউন্টার | 01712-502581 | 
এই নম্বরগুলোতে কল করে যাত্রীরা সময়সূচী, ভাড়া, টিকিট বুকিং ও অন্যান্য ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য জানতে পারবেন। কাউন্টারে সরাসরি যোগাযোগ করলে সিট কনফার্মেশন ও ট্রিপ সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্যও জানা যায়।
বাস টিকেট কেনার পদ্ধতি?

বাংলাদেশে এখন বাস টিকিট কেনা আগের চেয়ে অনেক সহজ। আপনি চাইলে অনলাইনে বা সরাসরি কাউন্টার থেকেও টিকিট নিতে পারেন। অনলাইনে টিকিট কেনার জন্য জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলো হলো Shohoz, BDTickets, BusBD, এবং GreenLineBD। এখানে ধাপে ধাপে অনলাইনে টিকিট কেনার পদ্ধতি তুলে ধরা হলোঃ
১. প্রথমে নির্ভরযোগ্য সাইটে যান, যেমন bdtickets.com বা shohoz.com।
২. হোমপেজে “From” ঘরে Chittagong এবং “To” ঘরে Dhaka লিখুন।
৩. আপনার ভ্রমণের তারিখ নির্বাচন করুন।
৪. এখন সাইটটি আপনাকে সব বাস কোম্পানি, ভাড়া, এবং সময় দেখাবে।
৫. আপনার পছন্দের বাস নির্বাচন করুন — এসি বা নন-এসি।
৬. সিট সিলেক্ট করুন।
৭. এরপর মোবাইল নাম্বার এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিন।
৮. অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি (বিকাশ, নগদ, কার্ড ইত্যাদি) ব্যবহার করে টাকা পরিশোধ করুন।
৯. পেমেন্ট শেষ হলে আপনার মোবাইলে SMS বা ইমেইলে টিকিট কনফার্মেশন পাবেন।
১০. যাত্রার দিনে শুধু SMS বা প্রিন্ট কপি দেখালেই আপনি বাসে উঠতে পারবেন।
যদি কেউ অনলাইনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন, তবে সরাসরি কাউন্টার থেকেও টিকিট কেনা যায়। তবে ছুটির মৌসুম বা শুক্রবারে আগেভাগে টিকিট নেওয়াই ভালো, কারণ এই সময় যাত্রী সংখ্যা বেশি থাকে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
“চট্টগ্রাম টু ঢাকা বাসের সময়সূচী ও ভাড়া” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী বাসের ভাড়া কত?
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী নন-এসি বাসের ভাড়া সাধারণত ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে, আর এসি ও ভিআইপি কোচের ভাড়া প্রায় ১১০০ থেকে ১৮০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। ভাড়া বাস কোম্পানি ও সার্ভিসের মান অনুযায়ী কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যেতে কত সময় লাগে?
সাধারণত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যেতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে ট্রাফিক জ্যাম বা রাস্তার অবস্থার উপর নির্ভর করে সময় কিছুটা বাড়তেও পারে।
উপসংহার
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটটি বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ত ও জনপ্রিয় ভ্রমণপথগুলোর একটি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই পথে যাতায়াত করেন ব্যবসা, পড়াশোনা, চাকরি কিংবা পরিবারের কাজে। এখন আধুনিক বাস সার্ভিস ও অনলাইন টিকিট সিস্টেমের কারণে যাত্রা অনেক সহজ হয়েছে। যাত্রীরা এখন ঘরে বসেই পছন্দের বাস কোম্পানি, সিট, সময় ও ভাড়া অনুযায়ী টিকিট বুক করতে পারেন।
তবে ভ্রমণের আগে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি—যেমন, যাত্রার অন্তত একদিন আগে টিকিট নিশ্চিত করা, বাসের নাম ও কাউন্টার তথ্য যাচাই করা, এবং যাত্রার অন্তত ৩০ মিনিট আগে টার্মিনালে পৌঁছানো। এতে ঝামেলা এড়ানো যায় এবং ভ্রমণ হয় আরামদায়ক।
বিশেষ করে উৎসবের মৌসুমে আগেভাগে টিকিট নেওয়া ও নির্ভরযোগ্য বাস কোম্পানি বেছে নেওয়া নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি যাত্রার আগে গন্তব্য ও ট্রিপের সময় নিশ্চিত করুন। একটু পরিকল্পনা করলেই আপনার ঢাকা-চট্টগ্রাম ভ্রমণ হতে পারে নির্ভার, সাশ্রয়ী ও আনন্দদায়ক।
