cold2

বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায় সমূহ

বুকে কফ জমা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে শীতকালে, ধূলিময় পরিবেশে, বা যাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ আছে তাদের মধ্যে। কফ মূলত ফুসফুস বা শ্বাসনালীর অতিরিক্ত স্লিজ। এটি শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা পদ্ধতির অংশ, যা শ্বাসনালীকে পরিষ্কার রাখে এবং জীবাণু বা ধুলোবালি বের করতে সাহায্য করে। অনেক সময় কফ জমা হলে মানুষ অসুবিধা অনুভব করে, শ্বাসকষ্ট হয়, ঘুম ঠিকমতো হয় না এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। বাংলাদেশে শীতকালে শিশুরা, বয়স্ক মানুষ ও ধূমপায়ীদের মধ্যে কফ জমার সমস্যা বেশি দেখা যায়।

কফ সাধারণত হালকা বা মেঘলা সাদা থেকে ঘন বাদামী বা সবুজ রঙের হতে পারে। রঙের পার্থক্য প্রায়ই সংক্রমণ, প্রদাহ বা ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত। দীর্ঘ সময় কফ জমা থাকলে ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বুকের কফ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। ঘরোয়া ও ঔষধি উপায়ের মাধ্যমে কফ কমানো সম্ভব। খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি, এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম এই সমস্যার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

শিশুদের ক্ষেত্রে কফ জমা হলে তারা জ্বর, গলাব্যথা ও ঘুমের ব্যাঘাতের মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। বয়স্ক বা দীর্ঘমেয়াদী ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায়। বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে বায়ু দূষণও কফ জমার একটি বড় কারণ। গরম পানিতে ভাপ নেওয়া বা জায়গার আর্দ্রতা বাড়ানো অনেক সময় কফ কমাতে সাহায্য করে।

কফ শুধুমাত্র শারীরিক অসুবিধা নয়, এটি মনও অবসন্ন করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী কফ সংক্রমণ ফুসফুসের রোগ যেমন ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই কফের রঙ, ঘনত্ব এবং ঘনঘন উপস্থিতি লক্ষ্য করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘরোয়া প্রতিকার, সঠিক খাদ্য, পানি পানের অভ্যাস এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শিশু, বৃদ্ধ ও ধূমপায়ীসহ সকলের জন্য কফ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ব্লগে আমরা বুকের কফ জমার সমস্যা, ঘরোয়া প্রতিকার এবং ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়?

cold9

বুকে কফ জমা হলে তা শুধুমাত্র অস্বস্তি নয়, বরং শরীরের নানা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কফ মূলত ফুসফুস এবং শ্বাসনালীর অতিরিক্ত স্লিজ, যা শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ। তবে কফ দীর্ঘ সময় জমে থাকলে শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং স্বাভাবিক জীবনে বিঘ্ন ঘটায়।

বুকে কফ জমলে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হলো শ্বাসকষ্ট। কফের ঘনত্ব ফুসফুসের নালীতে জমে গেলে অক্সিজেন গ্রহণে সমস্যা হয়, যার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু বা দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসনালীর সমস্যায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি গুরুতর হতে পারে।

দ্বিতীয় সমস্যা হলো ঘুমে বিঘ্ন। রাতের সময় কফ জমা হলে নাকি ঘুম ভেঙে যায়, ঘুমের মান কমে যায়। শিশুরা রাতে কাঁপতে পারে, বারবার জেগে ওঠে, এবং স্বাভাবিক ঘুমের চক্রে বাধা পড়ে। এটি পরের দিনের ক্লান্তি এবং মনোযোগ কমিয়ে দেয়।

তৃতীয় সমস্যা হলো সংক্রমণের ঝুঁকি। ঘন কফ ফুসফুসে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়। যেসব মানুষ দীর্ঘ সময় কফ জমা নিয়ে চলেন, তারা ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

চতুর্থ সমস্যা হলো ঘন ঘন খোঁজাখুঁজি বা জ্বর। কফ জমলে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়, এবং মাঝে মাঝে জ্বর, গলাব্যথা বা সর্দি জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এটি শরীরকে দুর্বল করে।

পঞ্চম সমস্যা হলো দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি। কফ জমা থাকলে হাঁটা, কাজ করা বা খেলাধুলা করতে সমস্যা হয়। দীর্ঘ সময় কফের কারণে কণ্ঠও খুষখুষ করতে পারে এবং গলার খুসখুস শব্দ হতে পারে।

আরোও পড়ুনঃ  ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা?

শিশুদের ক্ষেত্রে কফ জমা হলে তারা খাবার খেতে অনিচ্ছুক হতে পারে, খেলাধুলায় মনোযোগ দিতে পারে না এবং শিক্ষায়ও প্রভাব পড়ে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী কফ শ্বাসনালীতে ক্ষতি করতে পারে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমায়।

সুতরাং বুকের কফ জমা হলে তা সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে শারীরিক ও মানসিক উভয় দিকেই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক প্রতিকার ও খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায় সমূহ

cold7

বুকে জমে থাকা কফ কমানো এবং সহজে বের করা সম্ভব ঘরোয়া কিছু কার্যকর উপায়ে। এই উপায়গুলো প্রায়শই নিরাপদ, সহজে পাওয়া যায়, এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা যায়। ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহারের আগে হালকা কফে প্রাথমিকভাবে এই পদ্ধতিগুলো কাজে লাগে, তবে যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

১. গরম পানি দিয়ে ভাপ নেওয়া

গরম পানি দিয়ে ভাপ নেওয়া কফ কমানোর সবচেয়ে প্রাচীন ও কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি। এটি মূলত ফুসফুসের এবং শ্বাসনালীর জমে থাকা স্লিজ নরম করে, ফলে কফ সহজে বের হয়। বাংলাদেশে শীতকালে বা ধূলিময় পরিবেশে এটি বিশেষভাবে কার্যকর। ভাপ নেয়ার সময় কিছু সময় ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নেওয়া দরকার, যাতে গরম বাষ্প শ্বাসনালীর প্রতিটি অংশে পৌঁছায়। দিনে দুইবার ১০–১৫ মিনিট ভাপ নিলে কফ কমে। ভাপে যোগ করতে চাইলে এক কাপ পানি-ভিত্তিক ঘরোয়া হালকা মশলা যেমন আদা বা তুলসী পাতা ব্যবহার করা যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে খুব বেশি গরম বাষ্প এড়াতে হবে এবং বড়দের তত্ত্বাবধানে করানো উচিত। নিয়মিত ভাপ নেওয়ার ফলে ফুসফুস পরিষ্কার থাকে, শ্বাস নেওয়া সহজ হয়, এবং রাতে ঘুমে বিঘ্ন কমে।

২. আদা ও মধু চা

আদা প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ কমায় এবং কফ নরম করে। মধুও গলার কফ কমাতে সাহায্য করে এবং গলাকে আরাম দেয়। এক কাপ গরম পানিতে কুচানো আদা এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে কফ কমে। সকালে এবং রাতে এটি খাওয়া বিশেষভাবে কার্যকর। বাংলাদেশে বাজারে তাজা আদা সহজলভ্য, তাই এটি নিয়মিত ব্যবহার করা যায়। আদা কফের সঙ্গে সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে, শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গরম চায়ের মতো এটি খেলে কফ নরম হয়, খুসখুস ভাব কমে এবং ঘন ঘন খোঁজাখুঁজি কম হয়। শিশুদের জন্য মধু ব্যবহার করা যায় যদি তাদের বয়স দুই বছরের বেশি হয়।

৩. লেবু ও গরম পানি

লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শ্বাসনালীর সংক্রমণ কমায় এবং কফ কমাতে সাহায্য করে। এক কাপ গরম পানিতে আধা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। সকালে খালি পেটে এটি বিশেষভাবে কার্যকর। এটি ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, কফ বের হওয়া সহজ করে, এবং শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়। লেবুর সঙ্গে চাইলে এক চামচ মধু যোগ করা যেতে পারে, যা গলার আরাম বাড়ায়। নিয়মিত লেবুর পানি খেলে শ্বাসনালীর প্রদাহ কমে এবং কফের ঘনত্ব কমে।

৪. তাপযুক্ত কম্প্রেস

বুকে গরম পানি বা হটপ্যাক রাখলে শ্বাসনালী শিথিল হয়। এটি কফ নরম করতে সাহায্য করে এবং শ্বাস নিতে সহজ হয়। দিনে দুইবার ৫–১০ মিনিট ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশে শীতকালে বা রাতের সময় এই পদ্ধতি বিশেষভাবে কার্যকর। গরম কম্প্রেসের ফলে বুকের ভিতরে জমে থাকা স্লিজ পাতলা হয় এবং কফ বের হওয়া সহজ হয়। বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে খুব গরম কম্প্রেস ব্যবহার এড়াতে হবে, যাতে ত্বকে ঝলসানো না হয়।

আরোও পড়ুনঃ  সাপোজিটরি দেওয়ার পর জ্বর না কমলে করণীয়?

৫. নুনের পানি দিয়ে গার্গল

নুনের পানি গলায় জমে থাকা কফ নরম করে এবং গলার সংক্রমণ কমায়। এক চায়ের চামচ নুন এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ২–৩ বার গার্গল করলে কফ কমে। এটি গলার খুসখুস ভাব দূর করে এবং শ্বাসনালীকে সুস্থ রাখে। বাংলাদেশের অনেক ঘরে নুন সহজলভ্য, তাই এটি ব্যবহার করা খুবই সুবিধাজনক। গার্গল করার সময় পানি গলায় বেশি চাপ দিয়ে টেনে না নেওয়া উচিত, যাতে গলা বা গলাধঃকরণে সমস্যা না হয়।

৬. ফলমূল ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার

কমলা, আঙুর, লেবু, পেঁপে প্রভৃতি ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং শ্বাসনালীর সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ফলমূল খেলে কফ কমে এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বাংলাদেশে এই ফলগুলো সহজলভ্য, তাই নিয়মিত ব্যবহার করা যায়। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে এবং কফের ঘনত্ব কমায়। শিশু ও বয়স্ক উভয়েই নিয়মিত ফলমূল খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

৭. পর্যাপ্ত পানি পান

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের স্লিজ পাতলা হয়। পাতলা স্লিজ সহজে বের হয়, ফলে কফ কমে। বিশেষ করে গরমে পানি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে শীতকালে কম পানি পান করলেও এটি কফ জমার ঝুঁকি বাড়ায়। দিনে ৮–১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত। পানি কেবল কফ কমায় না, শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শ্বাসনালীর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখে।

৮. মশলা ও হালকা গরম খাবার

কালো মরিচ, দারচিনি, গোলমরিচের মতো মশলা শ্বাসনালীর শীতলতা কমায় এবং কফ নরম করে। হালকা গরম খাবার ফুসফুসকে শিথিল রাখে। বাংলাদেশের রান্নায় এই মশলা সহজে পাওয়া যায়, তাই নিয়মিত হালকা গরম খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করা যায়। এটি কফের ঘনত্ব কমায়, শ্বাসপ্রশ্বাসে সহজতা আনে এবং গলার খুসখুস ভাব কমায়।

৯. শ্বাসব্যায়াম ও হালকা ব্যায়াম

গভীর শ্বাস নেওয়া, প্রানায়াম ও হালকা ব্যায়াম ফুসফুসকে শক্তিশালী করে। এটি কফ কমাতে সাহায্য করে এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে। প্রতিদিন সকালে ১০–১৫ মিনিট শ্বাসব্যায়াম করা উপকারী। বাংলাদেশের শহরে বায়ু দূষণ বেশি থাকলেও শ্বাসব্যায়াম ফুসফুসকে সচল রাখে। শিশু ও বড়দের জন্য এটি নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

১০. ধূমপান ও ধূলো এড়ানো

ধূমপান এবং ধূলিময় পরিবেশ কফের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ধূমপান না করা এবং পরিষ্কার পরিবেশে থাকা কফ কমাতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে ধুলোবালি বেশি, তাই মাস্ক বা ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করলে শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকে, কফ কমে এবং দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের ক্ষতি কমে। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বুকের কফ বের করার ঔষধ নাম

cold6

বুকে জমে থাকা কফ কমানোর জন্য বাজারে অনেক ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। এগুলো সাধারণত কফ পাতলা করার, শ্বাসনালী পরিষ্কার করার, এবং প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে ডাক্তার বা ফার্মেসি থেকে সহজেই এই ঔষধগুলো পাওয়া যায়, তবে সঠিক ডোজ এবং সময়ানুসারে ব্যবহার করা জরুরি। ভুলভাবে বা অতিরিক্ত ব্যবহার করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

সবচেয়ে সাধারণ ঔষধ হলো এক্সপেক্টোর্যান্ট। এগুলো কফ পাতলা করে এবং কফ সহজে বের হতে সাহায্য করে। প্রয়োজনীয় সময়ে ব্যবহার করলে শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকে। সঠিক ডোজ ব্যবহার করা জরুরি, বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে।

কফের সঙ্গে সংক্রমণ থাকলে ডাক্তার এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করতে পারেন। তবে শুধুমাত্র সাধারণ কফের জন্য এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশে অনেক মানুষ নিজে নিজে ঔষধ ব্যবহার করেন, কিন্তু এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আরোও পড়ুনঃ  বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়?

সিরাপ এবং লিকুইড এক্সপেক্টোর্যান্ট শিশু ও বড়দের জন্য নিরাপদ এবং দ্রুত কার্যকর। এগুলো কফের ঘনত্ব কমায় এবং শ্বাসনালীকে পরিষ্কার রাখে। সিরাপ সাধারণত দিনে ২–৩ বার খাওয়া হয়।

কিছু ঔষধে হালকা সেডেটিভ বা ঘুম আনা বৈশিষ্ট্য থাকে, যা রাতে ঘুম ভালো করতে সাহায্য করে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার এড়ানো উচিত।

সিরিয়াস কফ বা দীর্ঘমেয়াদী কফের ক্ষেত্রে ডাক্তার পরামর্শ দেবে এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ নির্ধারণ করবে। শিশু, গর্ভবতী বা দুধ খাওয়ানো মায়েদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ বিশেষভাবে জরুরি।

বাংলাদেশে ফার্মেসিতে সাধারণভাবে পাওয়া যায়: গ্লাইকোপ্রোলেট, ব্রংকোলিন, অ্যাম্ব্রোক্সল এবং মিউকোলাইটিক সিরাপ। এগুলো কফ পাতলা করে এবং শ্বাসনালীতে জমা স্লিজ কমায়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক ডোজে ব্যবহার করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

শ্বাসকষ্ট, জ্বর বা রঙ পরিবর্তিত কফ থাকলে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। কখনোই নিজে নিজে শক্তিশালী ঔষধ ব্যবহার করা উচিত নয়। ঔষধের সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান, ভাপ নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখাও অত্যন্ত জরুরি।

সঠিক সময়ে ঔষধ ব্যবহার করলে কফ দ্রুত কমে, শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয় এবং ফুসফুস সুস্থ থাকে। ঘরোয়া প্রতিকার এবং ঔষধ একসাথে ব্যবহার করলে ফল আরও ভালো হয়।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“বুকে কফ জমে শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

বুকের কফ কমাতে ঘরোয়া কোন পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর?

গরম পানি দিয়ে ভাপ নেওয়া, আদা-মধু চা, লেবু পানি এবং হালকা গরম খাবার বুকের কফ কমাতে সবচেয়ে কার্যকর। এগুলো কফ নরম করে, শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে এবং দৈনন্দিন জীবনে সহজে ব্যবহার করা যায়।

দীর্ঘমেয়াদী কফ জমা হলে কি করতে হবে?

দীর্ঘমেয়াদী কফ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে এক্সপেক্টোর্যান্ট সিরাপ বা অন্যান্য ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান, ভাপ নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখাও জরুরি।

উপসংহার

বুকে কফ জমা হওয়া একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে এবং দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধা দেয়। বাংলাদেশে শীতকালে, ধূলিময় পরিবেশে, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে কফের সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে ঘরোয়া প্রতিকার, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান এবং প্রয়োজনে ঔষধ ব্যবহার করে কফ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ঘরোয়া উপায় যেমন গরম পানিতে ভাপ নেওয়া, আদা-মধুর চা, লেবু পানি, হালকা গরম খাবার এবং শ্বাসব্যায়াম কফ কমাতে কার্যকর। এই পদ্ধতিগুলো নিরাপদ, সহজ এবং প্রায়শই সবার জন্য প্রযোজ্য। পাশাপাশি, ফার্মেসিতে পাওয়া এক্সপেক্টোর্যান্ট সিরাপ বা অন্যান্য ঔষধও প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শক্তিশালী ঔষধ ব্যবহার করা উচিত নয়।

কফ কমাতে এবং ফুসফুস সুস্থ রাখতে ধূমপান এড়ানো, পরিষ্কার পরিবেশে থাকা এবং ফলমূল ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে নিয়মিত নজরদারি করা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

শেষে বলা যায়, কফ একটি স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হলেও দীর্ঘমেয়াদী জমা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সঠিক ঘরোয়া প্রতিকার, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং প্রয়োজনে ঔষধ ব্যবহার করে কফ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত যত্ন নিলে শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকে, শ্বাসকষ্ট কমে এবং ফুসফুস সুস্থ থাকে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *