ডায়রিয়া হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে?
ডায়রিয়া হলে খাবার নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব জরুরি। আমাদের দেশে এটি সাধারন সমস্যা, বিশেষ করে বর্ষা ও গরমে বেশি দেখা যায়। ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ দ্রুত চলে যায়, তাই সঠিক খাবার খেলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। এই লেখায় আমরা সহজ ভাষায় বলব কোন কোন সবজি খাওয়া উচিত এবং কোনগুলো এড়িয়ে চলা ভালো। আমরা বাংলাদেশি রান্নার কথা মাথায় রেখে ঘরোয়া উপদেশ দেব। প্রতিটি সবজির পুষ্টিগুণ, কিভাবে দেয়া উচিত এবং কোন সময় খাওয়া ঠিক হবে—সব বলবো। লক্ষ রাখবেন, শিশুরা বা বৃদ্ধরা ডায়রিয়ার সময় আলাদা যত্ন দরকার। গুরুতর অবস্থায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এই লেখাটি সাধারণ জ্ঞানের জন্য—চিকিৎসার বিকল্প নয়। চলুন দেখি ডায়রিয়া হলে কোন সবজি খাওয়া যাবে এবং কেন।
ডায়রিয়া হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে?
ডায়রিয়া হলে সবজি বেছে নেওয়া দরকার সতর্কতার সাথে। সহজপাচ্য, কম ফাইবার আর হাইড্রেশনের সহায়ক সবজি খাওয়া ভালো। নিচে ১০টি সবজির তালিকা দিলাম—প্রতি একটি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং খাওয়ার পদ্ধতি জানানো আছে। চেষ্টা করেছি বাংলাদেশি রান্নার সঙ্গে মিল রেখে পরামর্শ দিতে। প্রত্যেক উপশিরোনামের নিচে আপনি জানতে পারবেন কখন, কীভাবে এবং কেন সেই সবজি উপকারী।
আলু (উপকাঠামো: সিদ্ধ আলু, মাখন কম)
আলুতে প্রধানত শক্তি দেয় এমন কার্বোহাইড্রেট থাকে যা হজমে সহজ। ডায়রিয়ার সময় সিদ্ধ আলু মৃদু ও সান্ত্বনাদায়ক, ফলে গ্যাস বা পেটে অস্বস্তি কম থাকে। আলুকে ভালোভাবে সিদ্ধ করেেলার পর খেতে দেবেন, চর্ম (ছাল) ছেঁটে দিন কারণ ছাল ফাইবার বেশি থাকে। খানিকটা লবণ এবং খুব সামান্য মাখন বা অলিভ অয়েল দিয়ে খেতে পারেন—এতে স্বাদও পাবেন এবং অতিরিক্ত তৈল বা মসলা দেবেন না। কাঁচা মশলা, মরিচ বা মরিচ পাউডার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ তা পেটে জ্বলনে বাড়িয়ে দিতে পারে। শিশুদের জন্য ছোট টুকরো করে দেওয়া ভালো, এবং তরুণ বা বৃদ্ধদের জন্য ছোট পরিমাণে বারবার খাওয়ান। আলু ভাজা বা তেলে ভরা প্যাটেটো না দিয়ে, সেদ্ধ আলু খাওয়া সর্বোত্তম। ডায়রিয়া কমে আসলে আলু পুরি বা হালকা ভাজা ধীর ধীরে চালাতে পারেন। আলুতে ফাইবার কম হলেও কেবল আলু খেলে পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে—অতএব সঙ্গে তরল ওORS (ওআরএস) নিন। দ্রুত শক্তি দিতে আলু ভাল কাজ করে, তাই প্রথম ২৪-৪৮ ঘণ্টায় এটি খুব উপকারী। আলু সাবধানে রান্না করে, সংক্রমণ রোধে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। অতি ঠান্ডা আলু খাওয়ানো উচিত নয়—মধ্যম তাপমাত্রায় খাওয়ান। কাঁচা বা কাঁচা স্যালাডের আকারে দেবেন না কারণ এটি পেটে অতিরিক্ত রিফ্রেশ ও ব্যাকটেরিয়া যুক্ত করতে পারে। ডায়রিয়ার পর ধীরে ধীরে আলুর পরিমাণ বাড়ান। আলু দুধ বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে দেবেন না, কারণ দুধ-দই সব সময় হজমে সমস্যা করতে পারে। বরেণ্য ব্যক্তি বা ডায়াবেটিস থাকলে আলুর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করবেন। বাড়িতে আলু ভাঙিয়ে হালকা স্যুপ ঢেলে দিলে শিশু খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। আলু যদি ঝেঁলে বা দুর্গন্ধ করে তবে ফেলে দিন—অবশিষ্ট আলু সংরক্ষণে সাবধানতা অবলম্বন করুন। কাঁচা আলু দিয়ে কোনো কেয়ার হোম বা বাড়িতে সংরক্ষণ করলে ঠান্ডা জায়গায় রাখুন। আলু কাটার পরে দ্রুত রান্না করুন যাতে অমানুষিক ব্যাকটেরিয়া না বাড়ে। আলু দিয়ে পটেটো পিউরি করা যায়, যা বয়স্কদের জন্য উপকারী। সব মিলিয়ে, ডায়রিয়ার প্রথম পর্যায়ে সিদ্ধ আলু নিরাপদ ও কার্যকর।
গাজর (উপকাঠামো: সিদ্ধ বা বাটা গাজর)
গাজরে ভিটামিন A ও পেকটিন আছে, যা হজমে সহায়ক হতে পারে। কাঁচা গাজর ফাইবার বেশি, তাই ডায়রিয়ার তীব্র পর্যায়ে সিদ্ধ বা হালকা বাটা গাজর খাওয়া উচিত। গাজর বেটে স্যুপ বা পিউরি বানিয়ে সহজে খাইয়ে দিতে পারেন, এতে শিশুদের জন্যও গ্রহণযোগ্য হয়। গাজর প্যাক করে বিক্রি হলে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যবহার করুন—মাটির দাগ থাকলে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। গাজরের রঙ যত তীক্ষ্ণ, পুষ্টিমান তত বেশি, কিন্তু ডায়রিয়া হলে রঙের থেকে প্যাচিস্ট উপযোগিতা ভাবুন। গাজর কিছুটা মিষ্টি হওয়ায় ছোটদের কাছে গ্রহণযোগ্য। যদি গাজর খুব কাঁচা দিয়ে দেন, তবে পেটে গ্যাস বা উপর্যুপরি ফাইবারের কারণে অস্বস্তি হতে পারে। গাজর কেটে ক্ষুদ্র টুকরো করে সিদ্ধ করলে হজম সহজ হয়। গাজর ও আলুর মিশ্রিত পিউরি তৈরি করলে স্বাদ ও পুষ্টি পাওয়া যায়। গাজর দিয়ে তৈল বা মসলা দিয়ে না দিয়ে, শুধু সামান্য নুন ও পানি ব্যবহার করে রান্না করুন। গাজর থেকে পাওয়া বিটা-ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন A-তে রূপান্তরিত হয়, যা ক্ষত সারাতে ও রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। ডায়রিয়া দীর্ঘ হলে, গাজরের সাথে ফলমূল ও তরল সমানভাবে দিতে হবে—অতিরিক্ত নির্ভরতা ঠিক নয়। গাজরের স্যুপ গরম অবস্থায় দিতে হবে, ঠান্ডা স্যুপ এ সময় উপযুক্ত নয়। গাজর সংরক্ষণ করলে পরিষ্কার ও শুষ্ক স্থানে রাখুন, নরম হয়ে গেলে ব্যবহার করবেন না। গাজর বাটা হলে সসের মতো করে দিলে শিশুরা সহজে খাবেন। ভাজা গাজর বা খুব মশলাযুক্ত গাজর এ সময় এড়িয়ে চলুন। গাজর খাওয়ার পর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া থাকলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। গাজর হজমে নরম করে তাই পেটের উপর চাপ কমায়।
কুমড়া (কুন্দা বা লাউ জাতীয়: সিদ্ধ কুমড়া)
কুমড়া পানির পরিমাণ বেশি ও হালকা ফাইবারযুক্ত, তাই ডায়রিয়ার সময় উপকারী। কুমড়া (লাউ, কুমড়া) গুলো সিদ্ধ করে খেতে দিলে পেটে ঝামেলা কম হয়। কুমড়া সস বা হালকা স্যুপ বানিয়ে খাওয়ানো যায়—শক্ত মশলা নিষেধ। কুমড়া দিয়ে তৈরি স্যুপে সামান্য লবণ ও এক চামচ অলিভ অয়েল দিলে পুষ্টি বৃদ্ধি পায়। কুমড়া কাঁচা খাওয়া এ সময় এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ তাতে ব্যাকটেরিয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। কুমড়া ভালোভাবে পরিষ্কার করে খোসা ছাটিয়ে রান্না করুন। কুমড়া হজমে সহজ, তাই শিশুরা ও বয়স্করা সহজে খেতে পারে। কুমড়া রান্নার সময় বেশি তেলে ভাজা না করে সেদ্ধ বা স্টিম করে খাবেন। কুমড়া দিয়ে পাতলা পিউরি বানালে পুষ্টি বজায় থাকে এবং পানি প্রতি সাহায্য করে। কুমড়া পেকে গেলে তা মিষ্টি ও নরম হয়—এটি হজমে সাহায্য করে। লবণ বেশি দেবেন না—ডায়রিয়া অবস্থায় লবণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি। শুষ্ক বা আধার গন্ধ থাকলে কুমড়া ব্যবহার করবেন না। কুমড়া মাঝে মাঝে কাঁচা পরিবেশন করা হয়, কিন্তু ডায়রিয়ার সময় রান্না করা প্রাধান্য দিন। কুমড়া সঙ্গে খুব রিচ সস বা দই মিশিয়ে কাজ করবেন না—দুই হার্ড খাবার একসঙ্গে পেটে চাপ বাড়াতে পারে। কুমড়া সহজে হজম হয় এবং শরীরকে কুল রাখে—বিশেষ করে গরম মৌসুমে। ডায়রিয়া কমে গেলে কুমড়া ধীরে ধীরে ডায়েটে রাখা যাবে। কুমড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, তবে চিকিৎসার বিকল্প নয়। কুমড়া দিয়ে স্যুপ বানালে শিশুদের স্বাদ বাড়াতে সামান্য আচারের বদলে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন যদি পেট সহ্য করে। কুমড়া পিউরি তৈরিতে কুকিং ওয়াটার সংরক্ষণ করে তরল হিসেবে ব্যবহার করা ভালো। কুমড়া কখনই রো স্টাইলে, ভারি কারি বা ক্রিমি সসের সঙ্গে দেবেন না।
ভাজা না করা করলা (কখনো যদি হালকা সিদ্ধ করা হয়)
করলা স্বাভাবিকেই কটু স্বাদের, কিন্তু সিদ্ধ করলে হজমে সহজ হয়ে যায়। ডায়রিয়ার সময় কাঁচা বা অতিরিক্ত তেলে ভাজা না করে হালকা সিদ্ধ করলেই ভাল। করলার তীব্রতার কারণে কিছু লোকের পেটে সমস্যা বাড়তে পারে, তাই প্রথমবার একটু অংশে দিয়ে দেখুন। করলাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, কিন্তু ডায়রিয়ার তীব্র অবস্থায় তা সব সময় উপকারী হবে না। করলা কেটে সেদ্ধ করে পিউরি করে দিলে শিশুরা খেতে পারে। করলার গুঁড়া বা মসলা কম ব্যবহার করুন, শুধুমাত্র সামান্য লবণ দিন। করলা বেশি কাঁচা দিলে ফাইবারের কারণে ডায়রিয়া বাড়তে পারে—অতএব সিদ্ধ করে দেয়া ভালো। করলা সঙ্গে দই না মিশান—কারণ দই অনেকের জন্য হজম সমস্যা করতে পারে। করলা দিয়ে তৈরি হালকা স্যুপে এক চামচ অলিভ অয়েল যোগ করলে পুষ্টি যাবে। করলা রাখার আগে টাটকা কিনুন, নরম বা যেসব অংশ কালো তা কেটে ফেলুন। করলা যদি খুব পচা গন্ধ করে তা ফেলে দিন। শিশুদের জন্য করলার অংশ ছোট রাখুন যাতে গিলে যেতে সমস্যা না হয়। করলা ডায়রিয়া থাকলে অল্প মাপেই দিন, ধীরে ধীরে বাড়ান। করলার রসে কিছু লোক উপকৃত হলেও ডায়রিয়াসমূহে তা সুপারিশ করা হয় না। কাঁচা করলা স্যালাড এড়িয়ে চলুন। করলা খাওয়ার পর যদি পেট খারাপ হয় তো বন্ধ করুন এবং ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। সিদ্ধ করলা সাধারণত নিরাপদ এবং অবসাদ কমাতে সাহায্য করে।
কচু (সেদ্ধ কচু পিউরি)
কচু ভাজা না করে সিদ্ধ করে খেলে সহজে হজম হয়। কচুতে কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং লোকাল ভাবে অনেক জায়গায় এটি কিচেনের ব্যবহার্য। কচু সেদ্ধ করে পিউরি করলে শিশুরাও সহজে খেলেও সমস্যা কম হয়। কচু কাঁচা দিলে বেশি কাঁচা ফাইবার থাকে, তাই ডায়রিয়ার সময় সেদ্ধ করে খেতে বলুন। কচু রান্নার আগে ভালোভাবে খোসা ছাড়িয়ে ও ধুয়ে নিন—কারণ মাটির কণা থাকলে পেটে সমস্যা বাড়তে পারে। কচু সাধারণত হালকা গন্ধযুক্ত, তাই বড়দের কাছে গ্রহণযোগ্য। কচু দিয়ে তৈরি হালকা তরকারি বা স্যুপে অতিরিক্ত লবণ ও মসলা যোগ করবেন না। কচু খাওয়ার পরে যদি গ্যাস বেড়ে যায়, তাহলে পরিমাণ কমান। কচু পিউরি দুধ না মিশিয়ে, শুধু পানি ব্যবহার করে বানানো ভালো। কচু সংরক্ষণে সতর্ক থাকুন—জিতলে নরম হয়, তা ফেলে দিন। কচুতে কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে যা কাঁচা খেলে সমস্যা করতে পারে—অতএব সেদ্ধ করে খাওয়া ঠিক। কচু বাচ্চাদের অল্প করে খাওয়ালে শক্তি যোগ হয়। কচু দিয়ে তৈরী রেসিপি সহজ ও সস্তা—গ্রামে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত। ডায়রিয়া কমে গেলে কচু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ডায়েটে যোগ করুন। কচু সঙ্গে বেশি তেল বা চর্বি না নিলে পেট ভালো থাকবে। কচু ফাইবারে মধ্যম মাত্রার, তাই একেবারে তীব্র ডায়রিয়াসমূহে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন। কচুতে থাকা শক্তি শরীরকে মেরামত করতে সহায়তা করে।
পালং শাক (হালকা সিদ্ধ পালং)
পালং শাক পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও কাঁচা বা বেশি কাঁচা শাক ডায়রিয়ার সময় উপযুক্ত নয়। পালং শাক হালকা সিদ্ধ করে লম্বা করে কেটে স্যুপে বা পিউরিতে মেশালে পুষ্টি পাওয়া যায়। পালং শাক আয়রন ও ভিটামিন থাকে, যা শরীরকে শক্তি দেয়—কিন্তু ডায়রিয়ার তীব্র পর্যায়ে হজমে চাপ বাড়াতে পারে যদি বেশি পরিমাণে খাওয়ানো হয়। পালং শাক ভালোভাবে ধুয়ে নিন যাতে মাটি ও ক্ষতিকর জীবাণু না থাকে। পালং শাকের সঙ্গে দই না মিশিয়ে খাওয়ান; বরং আলু বা কুমড়ার সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন। পালং শাক তৈরির সময় খুব বেশি তেল ব্যবহার করবেন না। থাকলে লেবুর রস একটু দিন, তবে যদি পেট সংবেদনশীল হয় তো না দিন। পালং শাক শিশুরা অনেক সময় পছন্দ করে না—পিউরিতে মিশিয়ে দিলে ভালো খেতে পারে। শুকনো বা বদ গন্ধযুক্ত পালং শাক ব্যবহার করবেন না। পালং শাক হজমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয়, তবে প্রথম ২৪-৪৮ ঘণ্টায় পরিমাণ সীমিত রাখুন। পালং শাকের পাতাগুলো খুব খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে কেটে রান্না করুন। যদি ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয়, পালং শাক ধীরে ধীরে খাদ্য তালিকায় যোগ করুন। পালং শাক রোজকার খাদ্যে উপকারী, তবে ডায়রিয়ার তীব্রতায় সামঞ্জস্য রাখুন। পালং শাকের তরল অংশ বেশি হলে সেটি স্টিম বা স্যুপে ব্যবহার করুন। পালং শাকের ওপর খুব মশলা বা তেলে ভাজা রান্না এ সময়ে এড়িয়ে চলুন। পালং শাক দিয়ে তৈরী সুপ শিশুর পানীয়ের সাথে খেতে ভাল অভিজ্ঞতা দেয়।
কুমাল আলু বা সাদা আলু (মিষ্টি আলু নয়—সাদা আলুয়ের হালকা অংশ)
সাদা আলু বা কুমাল আলু সাধারণত সহজপাচ্য, একটু ভাজা না করে সিদ্ধ করলে পেট শান্ত রাখে। এটি দ্রুত শক্তি দেয় এবং ওআরএস বা তরল খাওয়ার সময় শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। সাদা আলু পিউরি করে খাইলে শিশু ও বয়স্করা সহজে হজম করতে পারে। আলুর সঙ্গে দই মেশাবেন না; বরং সরাসরি উষ্ণভাবে দিন। আলু খোসা ছেঁটে, ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়ান। সংরক্ষিত আলু যদি নরম বা সবুজ অংশ থাকে তা কাটে ফেলুন। আলુ বেশি করে খেলে ক্যালোরি বেড়ে যেতে পারে—ডায়রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। আলুতে থাকা কার্বোহাইড্রেট দ্রুত শক্তি দেয়, তাই দুর্বল রোগীর জন্য সহায়ক। আলুর সাথে ঝাল বা তেলের ব্যবহার সীমিত রাখুন। আলু দিয়ে হালকা স্যুপ তৈরি করে দিন—তাতে লবণ সামান্য রাখুন। আলু কেটে রোদে শুকানো বা সংরক্ষণে সাবধান। আলু গলে গেলে ব্যবহার করবেন না। ডায়রিয়া কমে এলে আলু অন্যান্য সবজির সাথে মিশিয়ে স্বাভাবিক ডায়েটে ফিরানো যায়। আলু সবসময় সেদ্ধ অবস্থায় দিয়েই শুরু করুন।
কর্ণিশন খেঁচা মিষ্টি কুমড়া (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাউয়ের ভ্যারিয়েন্ট)
কর্ণিশন বা ছোট কুমড়া যদি থাকে, সেগুলো হালকা সেদ্ধ করলে পচা ধরা কম হয় এবং হজমে সহজ হয়। সাধারণ কুমড়া জাতীয় সবজি পানি বেশি ধরে রাখে, ফলে হাইড্রেশনে সহায়ক। ছোট কুমড়া কেটে সেদ্ধ করে পিউরিতে মিশিয়ে দিতে পারেন। কুমড়া স্যালাড মত দাওয়া ঠিক না—রান্না করে খান। কুমড়া দিয়ে তৈরী স্যুপ গরম অবস্থায় দিতে ভাল। কুমড়া সংরক্ষণে ঠান্ডা স্থানে রাখুন। কুমড়া খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন। কুমড়া যদি খুব কাঁচা হয় তবে পেটে ফাইবারের ফলে জটিলতা হতে পারে—অতএব সিদ্ধ বা স্টীম করুন। কুমড়া খুব বেশি মশলা মেশাবেন না। কুমড়া ছোট টুকরো করলে শিশুরাও খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কুমড়া দিয়ে তরল স্যুপ করলে শরীরকে ঠান্ডা রাখে—গরমে বিশেষ সুবিধা দেয়। কুমড়া পচা বা দুর্গন্ধ করলে ব্যবহার করবেন না। কুমড়া সঙ্গে অল্প নুন ও সামান্য তেল দিলে স্বাদ বাড়ে, কিন্তু তেল সীমিত রাখুন। কুমড়া ও আলু মিশিয়ে পিউরি করলে পুষ্টি বাড়ে। কুমড়া হজমে নরম হওয়ায় ডায়রিয়ার সময় সহায়ক।
মিষ্টি কুমড়া (ভাজা না করে উষ্ণ সেদ্ধ)
মিষ্টি কুমড়া বা স্কোয়াশ যদি থাকে, সেটা সিদ্ধ করে খাওয়ান—শরীরে সহজে পচে যায়। মিষ্টি কুমড়া ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেয়, ফলে শরীরকে শক্ত করে। মিষ্টি কুমড়া কেটে সেদ্ধ করে পিউরি করে দিলে শিশুরাও সহজে খায়। মিষ্টি কুমড়া কাঁচা খাওয়া এ সময়ে উপযুক্ত নয়। মিষ্টি কুমড়া বেশি মিষ্টি হলে শিশুরা দ্রুত স্বাদ পেতে পারে, কিন্তু শর্করা নিয়ন্ত্রণ দরকার হলে পরিমাণ দেখবেন। মিষ্টি কুমড়া দিয়ে স্যুপ বা হালকা কারি বানানো যায়, কিন্তু মসলার পরিমাণ কম রাখতে হবে। মিষ্টি কুমড়া সংরক্ষণে ঠান্ডা ও শুকনো স্থানে রাখুন। কাটা কুমড়া দ্রুত রান্না করে ফেলুন যাতে ব্যাকটেরিয়া না বাড়ে। কুমড়া বেটে পিউরি করলে পুষ্টি সহজে গ্রহণযোগ্য হয়। মিষ্টি কুমড়া ও আলুর মিশ্রন উপকারী। ডায়রিয়া চলা অবস্থায় কুমড়া দিয়ে ক্রিমি সস বানাবেন না। মিষ্টি কুমড়া থেকে পাওয়া ফাইবার শরীরকে ধীরে ধীরে শক্তি দেয়, তাই রোগীকে সাহায্য করে।
বেগুন (হালকা সিদ্ধ বেগুন—তেলঅল্প)
বেগুন সাধারণত তেলে ভাজলে বেশি জলশোষণ করে এবং হজমে ভারি হয়ে যায়, তাই ডায়রিয়ার সময় তেলে ভাজা বেগুন এড়িয়ে চলুন। বেগুন কেটে সেদ্ধ করে বা স্টিম করে খাওলে হজমে তুলনামূলক সহজ হয়। বেগুন পিউরি করে সরাসরি বা আলুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। বেগুন বেশি তেলে দিলে পেটে ভারি লাগে; তাই হালকা সেদ্ধ বা গ্রিল করা উত্তম। বেগুনে কিছু পর্যায়ে আঁচিল উপাদান থাকে যা কাঁচা খেলে পেট খটকা করতে পারে—সেদ্ধ করে দিন। বেগুন ভালোভাবে পরিষ্কার করে খোসা ছেঁটে ব্যবহার করুন। বেগুনের স্যুপ বা পিউরি কচকানো না করে হালকা রাখুন। বেগুন সঙ্গে খুব টক বা দই না মিশান; বরং আলু বা কুমড়ার সাথে মিশিয়ে দিন। বেগুন খাওয়ার পরে যদি গ্যাস বেশি হয় তবে পরিমাণ কমান। বেগুন সংরক্ষণে হাওয়া চলাচল ভালো জায়গায় রাখুন। শিশুদের জন্য ছোট টুকরো বেগুন সেদ্ধ করে দাওয়াই ভালো। ডায়রিয়া কমে গেলে ধীরে ধীরে ভাজা বেগুন বা মশলাদার রেসিপিতে ফিরিয়ে আনা যাবে। বেগুন পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এবং শরীরকে সহায়তা করে যদি সঠিকভাবে রান্না করা হয়।
উপসংহার
ডায়রিয়া হলে সঠিক সবজি বেছে নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। সাধারণভাবে সিদ্ধ বা স্টিম করা, কম ফাইবার এবং অতি তেলের ব্যবহার বর্জন করাই ভালো নীতি। আলু, গাজর, কুমড়া, কচু, পালং শাক ইত্যাদি হালকা ভাবে রান্না করে দেওয়া যায়—এগুলো শরীরকে শক্তি দেয় ও হজম সহজ করে। বিরত থাকা উচিত কাঁচা স্যালাড, অতিরিক্ত তেল, ভারি মশলা ও তেলে ভাজা সবজি। শিশুরা, গর্ভবতী মা এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন; সমস্যা স্থিত হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডায়রিয়ার সময় পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট প্রতিস্থাপন করা সবচেয়ে জরুরি—ওআরএস বা লবণ-চিনি মিশ্রণ উপকারে আসবে। রান্না করা সবজি সংরক্ষণে পরিষ্কারতার দিকে খেয়াল রাখুন যাতে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি না হয়। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাবারে ফিরে আসুন; প্রথমে হালকা সবজি, পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ডায়েট増। আশা করি এই তথ্যগুলো আপনার কাজে লাগবে এবং যদি প্রয়োজন হয়, আমরা আরও নির্দিষ্ট রেসিপি ও দিনভিত্তিক ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে দিতে পারি। দ্রুত সেরে উঠুন।
