toilet2

পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাওয়া যাবে?

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া এমন একটি সমস্যা যা প্রায় প্রত্যেক মানুষকেই জীবনে কখনো না কখনো ভোগাতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশে এটি খুবই সাধারণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক সময় হঠাৎ করেই এই সমস্যা দেখা দেয় এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পাতলা পায়খানার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যাওয়া, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। শিশু ও বয়স্ক মানুষদের জন্য এটি আরও বেশি বিপজ্জনক, কারণ তাদের শরীরে পানিশূন্যতা দ্রুত দেখা দেয়।

বাংলাদেশের মতো উষ্ণ আবহাওয়ায় এবং যেখানে অনেক সময় খাবার বা পানি সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা যায় না, সেখানে ডায়রিয়ার প্রকোপ তুলনামূলক বেশি। গ্রামাঞ্চল হোক বা শহর—যে কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় পেটের ইনফেকশন, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, দূষিত খাবার বা পানির কারণে পাতলা পায়খানা হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঝাল, তেল, ভাজাপোড়া খাওয়া বা হঠাৎ খাবারের পরিবর্তনের ফলেও এটি হতে পারে।

পাতলা পায়খানার লক্ষণ শুধু ঘন ঘন পায়খানা হওয়া নয়, এর সঙ্গে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, জ্বর, দুর্বলতা ইত্যাদিও থাকতে পারে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় শরীর থেকে পানি ও প্রয়োজনীয় লবণ বের হয়ে যাওয়া। এ কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সবসময় বলে থাকে পাতলা পায়খানা হলে প্রথম ও প্রধান করণীয় হলো ওরাল স্যালাইন (ORS) খাওয়া। কারণ এটি শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ করতে সাহায্য করে।

শিশুদের ক্ষেত্রে জিংক ট্যাবলেটও খুব কার্যকর, যা পাতলা পায়খানার সময়কাল কমিয়ে দেয় এবং পুনরায় ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমায়। বাংলাদেশে icddr,b এর গবেষণা এই বিষয়টি প্রমাণ করেছে। তবে গুরুতর অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

আমরা অনেক সময় পাতলা পায়খানা হলে কী খাবো আর কী খাববো না তা নিয়ে দ্বিধায় থাকি। কেউ ভাবে একেবারেই কিছু খাওয়া যাবে না, আবার কেউ ভাবে ভাত-মাছ-মাংস সব খেতে হবে। আসলে সঠিক খাবার বেছে নিলে সুস্থ হওয়া দ্রুত হয়। তাই আমাদের জানা দরকার পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কী, কোন খাবার খাওয়া উচিত, আর কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

এই ব্লগ পোস্টে আমি আপনাদের খুব সহজভাবে বিস্তারিতভাবে জানাবো পাতলা পায়খানা হলে কী করবেন, কী খাবেন এবং কী খাবেন না। আশা করছি পুরোটা পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন এবং প্রয়োজনে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি?

toilet4

পাতলা পায়খানা হলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে যান, আবার অনেকেই একে তেমন গুরুত্ব দেন না। আসলে এই সমস্যাকে হালকাভাবে নিলে বড় বিপদ হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে এটি জীবনহানির কারণও হতে পারে। তাই প্রথম থেকেই সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া খুব জরুরি।

প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করা। কারণ পাতলা পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও খনিজ লবণ বেরিয়ে যায়। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলছে—ORS (ওরাল স্যালাইন) খাওয়া অপরিহার্য। বাংলাদেশে সহজলভ্য ওরাল স্যালাইন প্যাকেট বাজারে পাওয়া যায়। তবে চাইলে ঘরে বসেও বানানো যায়। এক লিটার ফুটানো ঠান্ডা পানিতে আধা চা-চামচ লবণ এবং ছয় চা-চামচ চিনি মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়লে সেটাই হবে ঘরে বানানো ওরাল স্যালাইন।

শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর অল্প অল্প করে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। তবে একবারে অনেকটা খাওয়ানোর দরকার নেই, বরং ঘন ঘন অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। এতে শরীরে পানির ঘাটতি ধীরে ধীরে পূরণ হবে।

আরোও পড়ুনঃ  গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

এর পাশাপাশি শিশুদের জিংক ট্যাবলেট খাওয়ানো উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, জিংক খাওয়ালে শুধু ডায়রিয়ার সময়কাল কমে না, বরং পরবর্তী কয়েক মাস পর্যন্ত পুনরায় ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকিও কমে যায়। সাধারণত ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ১০–১৪ দিনের জন্য জিংক খাওয়াতে বলা হয়।

খাবারের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। অনেকেই ভাবে ডায়রিয়া হলে একেবারে না খাওয়াই ভালো। আসলে তা নয়। বরং হালকা, সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে। যেমন—ভাত, খিচুড়ি, কলা, স্যুপ, ডাবের পানি ইত্যাদি। এগুলো শরীরে শক্তি জোগায় এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। তবে ঝাল, তেল, ভাজাপোড়া এবং দুধজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো পেটের সমস্যা আরও বাড়াতে পারে।

যদি পাতলা পায়খানার সঙ্গে অতিরিক্ত জ্বর, রক্তসহ পায়খানা, অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা, অথবা শিশু ক্রমাগত কাঁদছে এবং পানি খেতে চাইছে না—তাহলে দেরি না করে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে। কারণ এটি হতে পারে গুরুতর সংক্রমণ বা অন্য কোনো বড় অসুখের লক্ষণ।

পাশাপাশি ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে টয়লেট ব্যবহারের পর, খাবার রান্নার আগে এবং খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। কারণ হাতের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

সুতরাং, পাতলা পায়খানা হলে প্রথম করণীয় হলো স্যালাইন খাওয়া, দ্বিতীয় করণীয় হলো হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া, আর তৃতীয় করণীয় হলো প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। এভাবে সঠিকভাবে যত্ন নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।

পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাওয়া যাবে?

toilet5

পাতলা পায়খানা হলে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন কী খাবেন আর কী খাবেন না। আসলে সঠিক খাবার বেছে নেওয়া খুব জরুরি। কারণ ঠিকমতো খাবার খেলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয় এবং ডিহাইড্রেশন কমে যায়। এ সময় ঝাল, ভাজা, তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। এখন একে একে জেনে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলো পাতলা পায়খানা হলে খাওয়া ভালো।

১. ভাত

পাতলা পায়খানার সময় সাদা ভাত খাওয়া সবচেয়ে ভালো। ভাত সহজে হজম হয় এবং শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি দেয়। তবে খুব বেশি তেল বা ঝাল দিয়ে রান্না করা উচিত নয়। হালকা ভাতের সঙ্গে সামান্য লবণ বা আলু ভর্তা খাওয়া যেতে পারে। গরম গরম ভাত শরীরকে আরাম দেয় এবং পেট ভর রাখে।

২. নরম খিচুড়ি

খিচুড়ি একটি আদর্শ খাবার পাতলা পায়খানার সময়। এতে চাল, ডাল এবং সামান্য সবজি মিশিয়ে হালকা করে রান্না করলে তা শরীরে শক্তি জোগায় এবং পেটের জন্যও উপকারী হয়। ঝাল, মরিচ বা বেশি তেল না দিয়ে শুধু হালকা লবণ ও সামান্য হলুদ দিলে খিচুড়ি হজমে সহজ হয়।

৩. আলু

আলু খুব সহজপাচ্য খাবার। সিদ্ধ আলু ভর্তা করে খাওয়া যায় অথবা ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। আলুর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা শরীরকে শক্তি দেয়। ঝাল বা তেল না দিয়ে শুধু লবণ মিশিয়ে খেলে এটি বেশ উপকারী।

৪. কলা

কলা একটি দারুণ ফল যা পাতলা পায়খানার সময় খুব উপকারি। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা শরীরের লবণের ঘাটতি পূরণ করে। কলা পেটের ভেতর একটি আস্তরণ তৈরি করে যা পায়খানা কমাতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন ১-২টা পাকা কলা খাওয়া ভালো।

আরোও পড়ুনঃ  ঠান্ডা লাগলে কি কি সমস্যা হয়?

৫. ডাবের পানি

ডাবের পানি বা নারিকেলের পানি শরীরের জন্য প্রাকৃতিক ORS হিসেবে কাজ করে। এতে প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ, পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও গ্লুকোজ থাকে যা দ্রুত পানিশূন্যতা দূর করে। পাতলা পায়খানার সময় ডাবের পানি অল্প অল্প করে পান করলে শরীর সতেজ থাকে।

৬. মুরগির স্যুপ

পাতলা পায়খানার সময় শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এ সময় গরম গরম মুরগির স্যুপ খাওয়া খুব উপকারী। এতে শরীর প্রোটিন পায়, আবার স্যুপ শরীরে পানি ও শক্তি সরবরাহ করে। তবে স্যুপে মরিচ বা ঝাল দেওয়া যাবে না, হালকা লবণ দিলেই যথেষ্ট।

৭. সাদা পাউরুটি

সাদা পাউরুটি হজমে সহজ এবং পেটে ভারী লাগে না। পাতলা পায়খানার সময় টোস্ট করা পাউরুটি খাওয়া যেতে পারে। চাইলে সামান্য কলা বা স্যুপের সঙ্গে খাওয়া যায়। এতে শরীর কার্বোহাইড্রেট পায় এবং দুর্বলতা কিছুটা কমে।

৮. দই

দইতে প্রোবায়োটিক থাকে যা পেটের ক্ষতিকর জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে। হালকা পাতলা দই খাওয়া পাতলা পায়খানার জন্য উপকারী হতে পারে। তবে দই খুব ঠান্ডা বা বেশি মিষ্টি হওয়া যাবে না। প্রতিদিন সামান্য দই খেলে অন্ত্র দ্রুত সুস্থ হয়।

৯. সেদ্ধ সবজি

পাতলা পায়খানার সময় কাঁচা সবজি এড়িয়ে চলা ভালো, তবে সিদ্ধ সবজি খাওয়া যায়। যেমন—সেদ্ধ গাজর, লাউ, পেপে ইত্যাদি। এগুলো সহজে হজম হয় এবং শরীরের জন্য ভিটামিন সরবরাহ করে।

১০. ওটস বা সুজি

পাতলা পায়খানার সময় ওটস বা সুজি রান্না করে খাওয়া ভালো। এগুলো পেটে সহজে হজম হয় এবং শরীরে শক্তি দেয়। চাইলে সামান্য দুধ বাদ দিয়ে পানিতে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীর দুর্বল হয় না এবং পেটের সমস্যা কমে।

পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাওয়া যাবে না?

toilet6

পাতলা পায়খানার সময় আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। আসলে ভুল খাবার খেলে অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে এবং রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই সময় এমন খাবার খাওয়া উচিত নয় যা হজমে কঠিন, অতিরিক্ত তেল-ঝালযুক্ত বা পেটকে উত্তেজিত করে।

প্রথমেই এড়িয়ে চলতে হবে ঝাল, মরিচ ও মশলাদার খাবার। কারণ এগুলো পেটের ভেতরকে উত্তেজিত করে এবং ডায়রিয়ার পরিমাণ বাড়ায়। অনেকেই ভেবে থাকেন ঝাল খাবার খেলে ঘাম হবে আর শরীর সুস্থ হবে—এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং ঝাল খাবার ডায়রিয়া আরও বাড়িয়ে দেয়।

তেলেভাজা ও ভাজাপোড়া খাবার যেমন—পরোটা, পেঁয়াজু, সমুচা, পাকোড়া, ফাস্টফুড ইত্যাদি একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। এগুলো হজম হতে সময় নেয় এবং পেটের উপর বাড়তি চাপ ফেলে।

দুধ ও দুধজাত খাবারও এড়িয়ে চলা দরকার। কারণ অনেকের ক্ষেত্রে দুধের ল্যাকটোজ হজম হয় না এবং পেটের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে পূর্ণচর্বিযুক্ত দুধ, মিষ্টি দই বা আইসক্রিম এই সময় খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়।

কাঁচা ফল ও সবজি পাতলা পায়খানার সময় ভালো নয়। যেমন—কাঁচা আম, কাঁচা কলা, শসা ইত্যাদি। এগুলো পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে এবং হজমে সমস্যা করতে পারে। তার বদলে সিদ্ধ বা রান্না করা সবজি খাওয়াই ভালো।

কফি, চা বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় শরীরকে আরও ডিহাইড্রেটেড করে তোলে। বিশেষ করে কফি ও কালো চা ডায়রিয়া বাড়াতে পারে। তাই এই সময় এড়িয়ে চলা উচিত।

আরোও পড়ুনঃ  বুকে কফ জমে শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়

অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয়, কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস বা কোমল পানীয়ও ক্ষতিকর। এগুলো পেটকে উত্তেজিত করে এবং হজমে সমস্যা তৈরি করে। অনেক সময় আমরা ভেবে থাকি কোমল পানীয় খেলে পেট শান্ত হবে, কিন্তু বাস্তবে এটি আরও সমস্যা বাড়ায়।

এছাড়া মাংস, বিশেষ করে গরু বা খাসির মাংস খাওয়া উচিত নয়। এগুলো হজমে ভারী এবং পেটে চাপ সৃষ্টি করে। মাছও যদি অতিরিক্ত ঝাল বা ভাজা হয় তবে তা এড়ানো ভালো।

সবশেষে বলা যায়, পাতলা পায়খানার সময় আমাদের খাবার তালিকায় থাকা উচিত হালকা, সিদ্ধ, নরম এবং সহজপাচ্য খাবার। ভুল খাবার খেলে শুধু সুস্থ হতে দেরি হয় না, বরং অনেক সময় জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাই এই সময় সঠিক খাবার বেছে নেওয়াই আসল করণীয়।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাওয়া যাবে?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

পাতলা পায়খানা হলে কি একেবারেই খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে?

না, একেবারেই খাবার বন্ধ করা উচিত নয়। বরং হালকা, নরম ও সহজপাচ্য খাবার যেমন ভাত, খিচুড়ি, কলা বা স্যুপ খেতে হবে। এতে শরীর দুর্বল হবে না এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব হবে।

পাতলা পায়খানা হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

যদি ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয়, রক্তসহ পায়খানা হয়, অতিরিক্ত জ্বর আসে বা শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

উপসংহার

পাতলা পায়খানা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে এটি মারাত্মক রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের জন্য এটি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শুরুতেই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রথম কাজ হলো শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করা, এজন্য ওরাল স্যালাইন (ORS) খাওয়া অপরিহার্য। ডাবের পানি, স্যুপ বা ঘরে তৈরি লবণ-চিনির পানি খাওয়াও উপকারী।

খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। পাতলা পায়খানার সময় খাওয়া যাবে এমন খাবারের মধ্যে ভাত, খিচুড়ি, কলা, সেদ্ধ আলু, ডাবের পানি, দই, স্যুপ ইত্যাদি সবচেয়ে ভালো। এগুলো সহজপাচ্য এবং শরীরকে শক্তি দেয়। অন্যদিকে ভাজাপোড়া, ঝাল, তেল, দুধজাত খাবার, কোমল পানীয়, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।

শিশুদের ক্ষেত্রে জিংক ট্যাবলেট খাওয়ানো খুবই জরুরি, যা ডায়রিয়ার সময়কাল কমায় এবং পুনরায় ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। আর প্রাপ্তবয়স্কদেরও ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। খাবার ও পানি যেন বিশুদ্ধ হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার, কারণ ডায়রিয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো জীবাণুযুক্ত হাত বা খাবার।

সারকথা হলো, পাতলা পায়খানার সময় আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরে সঠিক যত্ন নিতে হবে। স্যালাইন খেতে হবে, হালকা খাবার খেতে হবে এবং শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে। আর যদি অবস্থা গুরুতর হয়, যেমন রক্তসহ পায়খানা, উচ্চ জ্বর বা পানি খেতে না পারা—তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

এভাবে সচেতন থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাতলা পায়খানা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *