শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ?

শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়া বাবা-মার জন্য উদ্বেগের বিষয়। এটি শুধু অসুবিধা নয়, বরং শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাদেশে শিশুরা নানা কারণে সহজেই সংক্রমণের শিকার হয়।

শিশুর শরীর এখনও সম্পূর্ণভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারেনি। তাই ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরিবেশগত সংক্রমণ খুব সহজে শিশুর শরীরে প্রভাব ফেলে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর জ্বর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলেও ঘন ঘন জ্বরকে হালকা হিসেবে না নেওয়াই ভালো। কারণ এটি কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যা বা রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।

এই ব্লগে আমরা জানব—শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়ার প্রধান কারণ, কীভাবে শনাক্ত করবেন এবং প্রতিকার কী হতে পারে। এছাড়া প্রতিদিনের অভ্যাস ও খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে জ্বর কমানোর উপায়ও তুলে ধরা হবে।

শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ?

শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়া নানা কারণে হতে পারে। এটি হঠাৎ বা ধীরে ধীরে শুরু হতে পারে। নিচে ১০টি প্রধান কারণ ও তাদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।

১. দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে তৈরি হয়। জন্মের প্রথম বছরগুলোতে শিশুর ইমিউনিটি সবচেয়ে সংবেদনশীল থাকে।

আরোও পড়ুনঃ  শিশুর জ্বর না কমলে করণীয়?

বাংলাদেশে শিশুরা যথেষ্ট পুষ্টিকর খাদ্য না পেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং সংক্রমণ সহজে শরীরে প্রবেশ করে।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত দুধ, সঠিক খাদ্য ও বিশ্রাম শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া ভ্যাকসিন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

২. ভাইরাস সংক্রমণ

শিশুর ঘন ঘন জ্বরের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল ভাইরাস সংক্রমণ। যেমন- ডেঙ্গু, ফ্লু, সাধারণ ঠান্ডা।

শিশুরা স্কুল বা খেলার মাঠে ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। ভাইরাসের কারণে জ্বর সাধারণত ১-৩ দিন থাকে, তবে পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

পর্যাপ্ত পানি, বিশ্রাম এবং প্রয়োজনে ডাক্তারি পরামর্শ শিশুর সুস্থতায় সাহায্য করে।

৩. ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ

যখন ব্যাকটেরিয়া শিশুর শরীরে প্রবেশ করে, তখন জ্বর এবং ব্যথা দেখা দেয়। সাধারণত কণ্ঠ, কান, ফুসফুস বা প্রস্রাবের সংক্রমণে দেখা যায়।

বাংলাদেশে অনেক শিশুই অপরিষ্কার পানি, ধুলো বা সংক্রমিত খাবারের কারণে আক্রান্ত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ডাক্তারি নির্দেশমতো গ্রহণ জরুরি।

৪. ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI)

কিছু শিশুর প্রস্রাবের সমস্যা সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এটি জ্বরের সাথে প্রস্রাবের সময় ব্যথা ও বারবার প্রস্রাবের সমস্যা দেয়।

আরোও পড়ুনঃ  রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার কারণ?

বাবা-মা শিশুর স্বাস্থ্য ও হাইজিন ঠিক রাখলে UTI কমে। চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করলে সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়।

৫. টীকা না করা

ভ্যাকসিন না হলে শিশুর শরীর কিছু সংক্রমণের বিরুদ্ধে সংবেদনশীল থাকে। টীকা না করলে ঘন ঘন জ্বর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে সরকারি ও প্রাইভেট ক্লিনিকে টীকা নেওয়া সহজ। নিয়মিত ভ্যাকসিন শিশুদের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

৬. পুষ্টিহীনতা

ভিটামিন ও খনিজের অভাবে শিশুর শরীর দুর্বল হয়। এটি ঘন ঘন জ্বরের কারণ হতে পারে।

ভিটামিন A, C, D, আয়রন ও জিঙ্কের অভাব শিশুদের সংক্রমণের বিরুদ্ধে দুর্বল করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য, দুধ ও ফল শিশুর পুষ্টি বাড়ায়।

৭. অ্যালার্জি ও পরিবেশগত কারণ

ধুলো, ধোঁয়া বা কুলিং সিস্টেমের অ্যালার্জি শিশুর শরীরে সংক্রমণ বা জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে দূষিত পরিবেশ ও ঘন জনসংখ্যা শিশুর সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ায়। পরিষ্কার পরিবেশ ও নিয়মিত ঘরের হাওয়া চলাচল জরুরি।

৮. দীর্ঘমেয়াদি রোগ

শিশুর মধ্যে অটোইমিউন বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন থাইরয়েড সমস্যা, কিডনি সমস্যা বা ডায়াবেটিস থাকলে সংক্রমণ সহজে ছড়ায়।

আরোও পড়ুনঃ  ঘন ঘন সর্দি লাগা কিসের লক্ষণ সমূহ

ডাক্তারের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সঠিক ওষুধ ব্যবস্থাপনা জ্বর কমাতে সাহায্য করে।

৯. মানসিক চাপ ও অপর্যাপ্ত ঘুম

শিশুর মানসিক চাপ বা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর দুর্বল হয়। এটি জ্বরসহ অন্যান্য অসুস্থতা বাড়াতে পারে।

শিশু যথেষ্ট ঘুম পেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্ত থাকে। বাবা-মা হালকা খেলাধুলা ও মনোরঞ্জন নিশ্চিত করলে সুবিধা হয়।

১০. সংক্রমণ ছড়ানো পরিবেশ

বিদ্যালয়, খেলার মাঠ বা জনবহুল জায়গায় সংক্রমণ সহজে ছড়ায়। এটি শিশুর ঘন ঘন জ্বরের অন্যতম কারণ।

পরিষ্কার পরিবেশ, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং সংক্রমণ এড়ানো শিশুকে সুস্থ রাখে।

উপসংহার

শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়া একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এটি দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, সংক্রমণ, পুষ্টিহীনতা, অ্যালার্জি বা দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণে হতে পারে।

বাংলাদেশে শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্য, টীকা, পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং নিয়মিত ডাক্তারি পরামর্শ ঘন ঘন জ্বর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাথমিক সতর্কতা এবং সঠিক জীবনধারা শিশুদের সংক্রমণ ও জ্বর কমাতে সাহায্য করে। বাবা-মায়ের সচেতনতা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করে।

Similar Posts

  • শিশুর জ্বর ১০৪ হলে করণীয়?

    শিশুর জ্বর যখন ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে, এটি অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের একটি বড় কারণ। এমন উচ্চ জ্বর শিশুর শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং দ্রুত…

  • বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়?

    বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিবর্তনশীল — কখন গরম, কখন ঠান্ডা, আবার কখনও হঠাৎ বৃষ্টি। এই পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে আমাদের শ্বাসযন্ত্রের ওপর। অনেকেই এমন পরিস্থিতিতে বুকে…

  • কিডনি বড় হয়ে যাওয়ার কারণ?

    কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্তকে ফিল্টার করে, শরীর থেকে টক্সিন ও অতিরিক্ত পানি বের করে এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিডনি স্বাভাবিকভাবে একটি…

  • বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায় সমূহ

    বুকে কফ জমা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে শীতকালে, ধূলিময় পরিবেশে, বা যাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ আছে তাদের মধ্যে। কফ মূলত ফুসফুস বা শ্বাসনালীর অতিরিক্ত স্লিজ।…

  • সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

    বাংলাদেশে সজনে পাতা বা মোরিঙ্গা পাতা একটি অতি পরিচিত ভেষজ উপাদান, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ওষুধি গুণে সমৃদ্ধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গ্রামীণ এলাকায় এটি…

  • ঘন জ্বর হওয়া কিসের লক্ষণ?

    ঘন ঘন জ্বর হওয়া কোনো সাধারণ বিষয় নয়। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া, সংক্রমণ, পুষ্টির ঘাটতি বা কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। বাংলাদেশে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *