কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ?

কোমরের দুই পাশে ব্যথা বা ল্যাটারাল লম্বার ব্যথা অনেক মানুষের জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করে। এটি হঠাৎ বা ধীরে ধীরে শুরু হতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে গৃহস্থালি কাজ, অফিসের কাজ এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকার কারণে এই সমস্যা খুব সাধারণ।

কোমরের পাশে ব্যথা শুধু পেশির সমস্যা নয়, বরং হাড়, ডিস্ক বা অঙ্গ-প্রতঙ্গের অন্য সমস্যা থেকেও হতে পারে। অনেক মানুষ এই ব্যথাকে হালকা সমস্যা ধরে অবহেলা করেন, যা পরে জটিলতা তৈরি করতে পারে।

প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক কারণ বোঝা গেলে সহজ প্রতিকার গ্রহণ করা সম্ভব। তবে সঠিক চিকিৎসা না নিলে এটি দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল সমস্যায় রূপ নিতে পারে।

এই ব্লগে আমরা জানব—কোমরের দুই পাশে ব্যথার প্রধান কারণগুলো কী, কিভাবে শনাক্ত করবেন এবং প্রতিকার কী হতে পারে। এছাড়া ঘরে বসে কিছু সহজ অভ্যাস অনুসরণ করে ব্যথা কমানো সম্ভব কি না, তাও জানানো হবে।

কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ

কোমরের দুই পাশে ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি অনেক সময় হঠাৎ শুরু হয়, আবার কখনো ধীরে ধীরে বাড়ে। নিচে ১০টি প্রধান কারণ এবং প্রতিকার বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো।

আরোও পড়ুনঃ  গরুর ফেপসা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

১. পেশি বা লিগামেন্টের টান

কোমরের পেশি অতিরিক্ত চাপ বা হঠাৎ কোনো শারীরিক কাজের কারণে টান পেতে পারে। এটি সাধারণত ব্যথা, স্পেসিফিক স্টিফনেস এবং অস্বস্তি তৈরি করে।

বাংলাদেশে মহিলারা ঘরোয়া কাজের সময় দীর্ঘ সময় বেগে বাঁকানো অবস্থায় থাকেন, যা কোমরের পাশে পেশিতে চাপ সৃষ্টি করে।

প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম, হালকা স্ট্রেচিং এবং হট কম্প্রেস ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম ও পেশি শক্ত করলে পুনরায় ব্যথা কম হয়।

২. মেরুদণ্ডের ডিস্ক সমস্যা

ডিস্ক বেরিয়েশন বা স্লিপড ডিস্ক কোমরের পাশে ব্যথার প্রধান কারণ। ডিস্ক পেছনের নার্ভে চাপ দিলে পিঠের পাশে ব্যথা, ছোটা বা কোমর ভাঙা অনুভূত হয়।

বাংলাদেশে অনেকেই ভুল আসন বা ভারি জিনিস তোলার কারণে এই সমস্যার সম্মুখীন হন।

চিকিৎসকের পরামর্শে ফিজিওথেরাপি, সঠিক আসন এবং ভারি কাজ থেকে বিরত থাকলে ডিস্কের ব্যথা অনেকাংশে কমে।

৩. কিডনির সমস্যা

কিডনির সংক্রমণ, পাথর বা কিডনি রোগও কোমরের পাশে ব্যথার একটি সাধারণ কারণ। ব্যথা সাধারণত পিঠের উঁচু অংশে শুরু হয় এবং নিচের দিকে ছড়িয়ে যায়।

বাংলাদেশে এই ধরনের ব্যথা অনেক সময় পেশি ব্যথা মনে করা হয়। তবে যদি প্রস্রাবের সমস্যা, জ্বর বা বমিভাব থাকে, তবে তা কিডনির সমস্যা নির্দেশ করে।

আরোও পড়ুনঃ  গরুর অন্ডকোষ খাওয়া হালাল না হারাম?

প্রয়োজনে ডাক্তার কিডনি পরীক্ষা করে সমস্যার মূল কারণ নির্ণয় করেন।

৪. স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন

ওজন বেশি হলে কোমরের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এতে পেশি দুর্বল হয় এবং কোমরের পাশে ব্যথা সৃষ্টি হয়।

স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত হাঁটা এবং ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ওজন কমানো শুধু কোমরের ব্যথা কমায় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে হার্ট এবং কিডনির জন্যও উপকারী।

৫. হরমোন পরিবর্তন

মহিলাদের মেনোপজ বা মাসিক চক্রের সময় হরমোন পরিবর্তনের কারণে কোমরের পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

হরমোন পরিবর্তনের কারণে পেশি ও হাড় দুর্বল হয়ে যায়। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট এবং হট কম্প্রেস ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

৬. গর্ভাবস্থা

গর্ভাবস্থায় শিশুর ওজন এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে কোমরের পাশে চাপ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শেষের মাসগুলোতে এই ব্যথা বৃদ্ধি পায়।

গর্ভাবস্থায় ব্যথা কমাতে হালকা হাঁটা, সাপোর্ট বেল্ট ব্যবহার এবং প্রজনন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে হালকা স্ট্রেচিং কার্যকর।

৭. নীরব অঙ্গ রোগ

লিভার, প্যানক্রিয়াস বা অন্যান্য অঙ্গের সমস্যা কোমরের পাশে ব্যথা হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। এটি সাধারণ ব্যথার মতো হালকা শুরু হলেও ক্রমে তীব্র হয়।

যদি ব্যথার সঙ্গে জ্বর, বমিভাব বা ক্ষুধা কমে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরোও পড়ুনঃ  গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার উপকারিতা সমূহ

৮. মানসিক চাপ

দীর্ঘ সময় মানসিক চাপ থাকলে পেশি সংকুচিত হয় এবং কোমরের পাশে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।

ধ্যান, হালকা ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক বিশ্রাম চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৯. অনিয়মিত ব্যায়াম

ব্যায়াম না করা বা হঠাৎ অতিরিক্ত ব্যায়াম পেশিতে টান সৃষ্টি করে। এতে কোমরের পাশে ব্যথা অনুভূত হয়।

নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং সঠিক স্ট্রেচিং কোমর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

১০. বয়সজনিত পরিবর্তন

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে হাড় দুর্বল ও পেশি শিথিল হয়। এই কারণে কোমরের পাশে ব্যথা বেশি দেখা দেয়।

ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, হালকা ব্যায়াম এবং সঠিক আসন ব্যবহারের মাধ্যমে বয়সজনিত ব্যথা কমানো সম্ভব।

উপসংহার

কোমরের দুই পাশে ব্যথা একটি সাধারণ কিন্তু অসুবিধাজনক সমস্যা। এটি ধীরে ধীরে শুরু হলেও দীর্ঘমেয়াদে জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। সঠিক আসন, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, মানসিক চাপ কমানো এবং নিয়মিত বিশ্রাম ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশের নারীদের জীবনধারার সঙ্গে মানিয়ে কিছু সহজ অভ্যাস অনুসরণ করলে এই সমস্যা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং শরীরের সংকেত গুরুত্ব দিয়ে চলা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *