শিশুর জ্বর না কমলে করণীয়?
শিশুর জ্বর কখনো কখনো স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে কমে না। এমন অবস্থায় অভিভাবকরা চিন্তিত হন। জ্বর সাধারণত সংক্রমণ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা প্রদাহজনিত কারণে হয়।
শিশুর জ্বর যদি নিয়মিত কমতে না চায় বা ২৪–৪৮ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়, তা চিকিৎসা বা বাড়িতে সঠিক যত্নের প্রয়োজন।
বাংলাদেশের পরিবেশে শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক সময় কম থাকে, বিশেষ করে শিশুদের অল্প বয়সে।
এই ব্লগে আমরা জানব—শিশুর জ্বর না কমলে করণীয়, সতর্কতার লক্ষণ, প্রতিকার এবং চিকিৎসা পরামর্শ।
শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দীর্ঘস্থায়ী জ্বর শরীরের শক্তি হ্রাস করে এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
শিশুর জ্বর না কমলে করণীয়?
শিশুর জ্বর না কমার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সঠিক পর্যবেক্ষণ ও পদক্ষেপ নিলে জটিলতা এড়ানো যায়। নিচে ১০টি প্রধান উপশিরোনাম এবং তাদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।
১. জ্বরের পর্যবেক্ষণ ও তাপমাত্রা মাপা
ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে শিশুর তাপমাত্রা নিয়মিত মাপা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২৪ ঘণ্টায় জ্বরের ওঠা-নামা পর্যবেক্ষণ করলে কোন সময় শিশু সবচেয়ে অসুস্থ হয় তা বোঝা যায়।
জ্বর ১০৩–১০৪°F বা তার বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
শিশুর আচরণ, ঘুমের ধরণ, খাওয়া-দাওয়া এবং মোট স্বাভাবিক কার্যক্রম নোট করা উচিত।
২. পর্যাপ্ত তরল ও পানি নিশ্চিত করা
জ্বর হলে শিশুর দেহ থেকে জল কমে যায়, যা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
বুকফিডিং, ফর্মুলা মিল্ক বা ডাক্তারি পরামর্শে ORS দেওয়া দরকার।
শিশুকে ঘন ঘন ছোট পরিমাণে তরল দেওয়া ভালো।
যদি শিশুর মুখ শুকনো হয় বা প্রস্রাব কমে যায়, তা সতর্কতার ইঙ্গিত।
৩. হালকা পোশাক এবং আরামদায়ক পরিবেশ
শিশুর শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হালকা কাপড় পরানো জরুরি।
শিশুর ঘরে ফ্যান বা হালকা শীতল বাতাস রাখা আরাম দেয়।
শিশু ঘামে ভিজলে আলতোভাবে মুছে দিতে হবে।
শিশুর ঘুমের সময় শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
৪. জ্বর কমানোর ওষুধ ব্যবহার
ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল বা অন্যান্য জ্বর কমানোর ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
নিজে ডোজ পরিবর্তন বা অতিরিক্ত ওষুধ দেওয়া বিপজ্জনক।
ওষুধের পর শিশুর তাপমাত্রা এবং আচরণ পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
শিশু আরামদায়ক থাকলে জ্বর কমতে সাহায্য করে।
৫. শিশুর খাওয়া ও পুষ্টি
জ্বরের সময় শিশুর খাওয়ার আগ্রহ কমে যায়।
হালকা, পুষ্টিকর খাবার বা মিল্ক দেওয়া জরুরি।
অতিরিক্ত জোর না দিয়ে শিশুর স্বাভাবিক খাওয়ার অভ্যাস বজায় রাখা প্রয়োজন।
শিশুর পুষ্টি ঠিক থাকলে শরীর সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম হয়।
৬. ঘুম ও বিশ্রাম
শিশুর শরীর সংক্রমণ বা জ্বরের সঙ্গে লড়াই করতে যথেষ্ট বিশ্রাম প্রয়োজন।
শিশুকে শান্ত পরিবেশে রাখা, আলো ও শব্দ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
৭. ডাক্তারি পরামর্শ ও পরীক্ষা
শিশুর জ্বর ২৪–৪৮ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখানো জরুরি।
চিকিৎসক শিশুর জন্য উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন।
নিজে ওষুধ দেওয়া বা ডোজ পরিবর্তন করা ঝুঁকিপূর্ণ।
শিশুর সংক্রমণ বা জটিলতা এড়াতে চিকিৎসা প্রয়োজন।
৮. সংক্রমণ প্রতিরোধ
শিশুর সংক্রমণ এড়াতে ঘর পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।
ফ্লোর, খেলনা এবং আশেপাশের জায়গা জীবাণুমুক্ত রাখুন।
পরিচ্ছন্ন হাত এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করে।
শিশুর সংক্রমণ দ্রুত ছড়ানো রোধে সহায়ক।
৯. বিশেষ লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ
শ্বাসকষ্ট, চোখ বা দৃষ্টি সমস্যা, অতি ক্লান্তি বা কম খাওয়া দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
এই ধরনের লক্ষণ গুরুতর সংক্রমণ বা জটিলতার ইঙ্গিত দেয়।
হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।
১০. রুটিন ভ্যাকসিন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
শিশুর রুটিন ভ্যাকসিন আপ টু ডেট থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
BCG, পোলিও, ডিপথেরিয়া এবং অন্যান্য ভ্যাকসিন শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং অভ্যাস শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করে।
উপসংহার
শিশুর জ্বর যদি না কমে, তবে প্রাথমিকভাবে তাপমাত্রা মাপা, পর্যাপ্ত পানি ও তরল দেওয়া, হালকা কাপড় পরানো এবং আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
শিশুর খাওয়া, ঘুম, ঘরের পরিচ্ছন্নতা এবং ভ্যাকসিন আপ টু ডেট থাকা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ডাক্তারি পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ শিশুর দ্রুত সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
শিশুর সংক্রমণ বা জটিলতা বৃদ্ধি পেলে সময়মতো হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম, শান্ত পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস শিশুকে দ্রুত সুস্থ করতে সহায়ক।
অভিভাবকের সচেতনতা, সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং দ্রুত পদক্ষেপ শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করে।
